কৃষিজমি নষ্ট করে চলছে অবৈধ ইট ভাটা

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদীতে একদিকে যেমন কৃষিজমি বিনষ্ট, অন্যদিকে বৃক্ষ নিধন করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে অবৈধ ইট ভাটা মালিকরা। সরকারিভাবে ইট উৎপাদনের জন্য জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের নির্দেশ থাকলেও ইট ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটায় এই কাঠ এনে ইট পোড়ানো হচ্ছে এবং কৃষিজমি খনন করেও আনা হচ্ছে ইট তৈরির মাটি। স্থানীয় অনেক ব্যক্তিরই অভিযোগ ইট ভাটায় মাটি ও কাঠ আনতে নষ্ট করা হচ্ছে রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন মানুষের ফসলি জমি। সূত্র মতে, ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ৬৮টি। তবে এবছর এখন পর্যন্ত সচল করা হয়েছে মোট ৫২টি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, বাবুলচারা, বিলকেদা, কামালপুরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এসব ইট ভাটা। পদ্মা নদীর তীর ঘেষে গড়ে ওঠা এসমস্ত ইট ভাটা গুলোতো সরকারের বেধে দেয়া নিয়ম মানার কোন বালাই নাই। সেখানে বড় এবং মোটা গাছ গুলোকে ছেটে ব্যবহার উপযোগী করতে প্রায় প্রতিটি ইট ভাটার আঙ্গিনায় বসানো হয়েছে স’মিল। এমন অভিযোগও উঠেছে ইট ভাটা মালিক সমিতি কর্তৃক প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ইটভাটা। ইট তৈরির কারিগর মোঃ মিনারুল বলেন, আমাদের কাজ শুধু ইট তৈরি করা। সেটা কি দিয়ে পোড়ানো হবে সেটা আমরা কিভাবে বলব? বাকিটা তো আপনারাই দেখছেন।

ইট পোড়ানো কারিগর (মিস্ত্রি) মোঃ মজিবার হোসেন বলেন, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে প্রতিটি ইটের দাম হবে দ্বিগুণ। তাই কয়লার পাশাপাশি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কেন না ইট যদি মানুষের ক্রয় সাধ্যের মধ্যে না থাকে তাহালে মানুষ ইট কেনা বন্ধ করে দেবে। সেই সাথে ভাটাগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। বিলকেদা এলাকার বাসিন্দা মোঃ হজিবর আলী অভিযোগ করে বলেন, বছরের এই দিনগুলো আসলে আমরা এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ি। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চলার কারনে রাস্তায় সারাদিনই ধুলা/বালি উড়তে থাকে। এতে আমাদের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। সাথে কৃষিজমিও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইটভাটা অঞ্চলের মানুষের একটাই কথা, এই সময় প্রশাসন আসেন দুয়েকটি ভাটার চিমনি ভাঙচুর করে চলে যান।

সাংবাদিকরা আসে ছবি তোলে, আবার চলে যায়। আর ভাটার মালিকরা বস্তাভর্তি টাকা দিয়ে প্রসাশনের মুখে কুলুপ মেরে পরিবেশ ধ্বংশের লাইসেন্স নিয়ে কৃষি জমিতে মাটি কেটে, গ্রাম গঞ্জের গাছপালা কেটে পরিবেশের বারোটা বাজাতে ব্যস্ত থাকে। তবে সবাই আসার পরও পরিবেশ ধ্বংশের এই মহাযজ্ঞ বন্ধ হয় না কেন, সে উত্তর তারা জানতে চান স্থানীয় প্রসাশনের কাছে। তবে অনেকেই মনে করেন জেলা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই চলে এ অবৈধ ভাটা। এ ব্যাপারে ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয় হোসেনের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে বার বার ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি। এ বিষয়ে জানতে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হকের মুঠোফেনে বার বার কল দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, শুনেছি ঈশ্বরদীর ইট ভাটাগুলোতে তাজা গাছ পোড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করেছি। তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ বা টাকা দেয়া কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা অচিরেই পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করবো।