ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইট-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটেন তারা

ইট-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটেন তারা

বর্তমানে যারা প্রবীণ বা মধ্যবয়সী, তাদের অনেকের জীবনেই শিশুকালে বাড়ির পাশের হাটে গিয়ে কাঠের টুলে বসে চুল-দাড়ি ছাঁটার অমø-মধুর স্মৃতি কমবেশি মনে আছে আজও।

আবার ‘হাটুরে নাপিত’ ‘নামডাকের নাপিত’ বা ‘নরসুন্দরের’ কাছে ক্ষৌরকাজের সময়ের নানা গল্পও জমা আছে অনেকের জীবনখাতার ঝুলিতে। কালের পরিক্রমায় এখন হাটে-বাজারে গড়ে উঠেছে আধুনিক ও উচ্চমানের সেলুনে ভিড় বিলুপ্তির পথে জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে চুল ও দাড়ি কাটার ঐতিহ্য।

তিতাসের বাতাকান্দি বাজারে গতকাল বুধবার সাপ্তাহিক হাটে মাটিতে বসে চুল ও দাড়ি কাটানোর চিরচেনা দৃশ্যটি চোখে পড়ে যায়। পিঁড়িতে বসে অল্প খরচে এখনো তাদের কাছে অনেকেই চুল ও দাড়ি কাটান। বাতাকান্দি বাজারের গৌরীপুর-হোমনা সড়কের পশ্চিমপাশে ফারহান রেন্ট-এ কার সামনে নেপার চন্দ্র শীল (৫০) এবং ও ডক্টরস্ ডেন্টাল কেয়ারের সামনে মধু চন্দ্র শীল (৮০) প্রবীণ দুইজনের চুল-দাড়ি কেটে সুন্দর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের পাশেই ছোট্ট বাক্সে সাজানো ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকিরি, পাউডার ও লোশন। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন প্রায় ৮০ বছর বয়সের একজন ব্যক্তি। যাওয়ার সময় বলে উঠলেন, কি-রে মধু কেমন আছিস? তাড়াতাড়ি কর, সেভটা করে নামাজে যাব। বুঝলাম, এপেশার মানুষদের কদর এখনও আছে, তবে বয়োজৈষ্ঠদের কাছে।

নেপাল চন্দ্র শীলের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, ‘বাবা’র হাত ধরেই এ পেশায় আসা। বলতে পারেন, জন্মগত পেশা।’ বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রাধানগর গ্রামে।

এক ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে সকলেই বিবাহিত। ছেলে রাজিব চন্দ্র শীল রাধানগর বাজারে ছোটখাটো একটা সেলুন দিয়েছে। কয়েক মাস আগে রাজিব বিয়ে করেছে, সংসারে খরচের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সে কর্মমুখী হয়েছে। ছেলে, ছেলের বৌ আর নিজের পত্নীকে নিয়ে নেপালের সংসার। প্রতি বুধবার বাতাকান্দি বাজারে সাপ্তাহিক হাটে আসেন। সোমবার ও বৃহস্পতিবার যান মেঘনার মুক্তিনগর বাজারে। এভাবে খোলা আকাশের নিচে বসে মানুষের চুল-দাড়ি কাটেন।

দাড়ি কাটতে নেন ১০ থেকে ২০ টাকা আর চুল কাটতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বেলাশেষে সবমিলিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। দুপুরে হালকা নাস্তা, পান-সিগারেট এবং যাতায়াত বাবদ ১০০ থেকে দেড়শ’ টাকা খরচ হয়। নেপাল চন্দ্র শীলের একটু উত্তরপাশে এখন ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন মধু চন্দ্র শীল। বাড়ি হোমনার রাজাপুর-কাশিপুর। দুই ছেলের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জে পবিরার নিয়ে বসবাস করছেন। পেশা একই। মাসে মাসে বাবার জন্য খরচের টাকা পাঠান। তবে তা অতি অল্প। আরেক ছেলে প্রচুর পান খায়, এ পেশায় তার মন বসে না। তাই শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিতাসের কলাকান্দি গ্রামে। গতকাল বুধবারে বাতাকান্দির হাটে আসলেও সোমবার যান হোমনার ঘাড়মোড়া বাজারে। সেই ছোট্টবেলা বাবা গিরিস চন্দ্র শীলের হাত ধরে এখানে এসেছিলেন। এখনও আসেন। তাই অনেকের পরিচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত