ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্যামনগরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ছড়াছড়ি

শ্যামনগরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ছড়াছড়ি

শ্যামনগরে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও নবায়ন হয় না। এতে একদিকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ৪০টি। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে কয়েকজন নিজস্ব চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্সসহ জনবল থাকার কথা, তা নেই কোনোটিতেই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলছে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই। এরপরও বছরের পর বছর চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে দালাল চক্র। ফলে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। প্রায়ই মৃত্যু ঘটতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। তারপরও বীরদর্পে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে চুক্তি করে অপারেশন করা হচ্ছে চুক্তির পর অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অল্প কেটে রোগীর অভিভাবকদের অপারেশন থিয়েটারে ডেকে নিয়ে দেখানো হচ্ছে জঠিল রোগ হয়ে গেছে, এটা অপারেশন না করলে ১/২ মাস পরে রোগী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। এসব ভয় দেখিয়ে নতুন করে বেশি টাকা দাবি করছে দাবির টাকা মেটাতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি হাড়ি-পাতিল বিক্রি করেও ক্লিনিকের টাকা পরিশোধ করতে দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে সিজারের রোগী এলে বিভিন্ন ক্লিনিকের নিযুক্ত দালাল চক্র কিছু নার্সদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং প্রথমে বিভিন্ন পরীক্ষা দিচ্ছে এবং হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। বিশেষ করে যারা ডাক্তার আসছে তাদের চককদার সাইনবোর্ডে সোভা পাচ্ছে- এমবিবিএস, এফসিপিএ, প্রথম পর্ব শেষ পর্ব ইত্যাদি এসব সাইন বোর্ড দেখে রোগীরা ডাক্তারের কাছে যেয়ে প্রতারিত হচ্ছে। ক্লিনিক মালিকরা পরিক্ষা দিচ্ছে একগাদা পরিক্ষার সময় প্যাথলজিতে বলে রাখছে আল্ট্রাসনোগ্রামে বাচ্ছার ওজন যাই থাকুক ২ কেজি ৫শ গ্রামের উপর লিখে দিতে হবে। কারণ ২ কেজি ৫০০-এর নিচে অপারেশন করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি বাচ্চা ও মায়ের মৃত্যুও ঘটতে পারে। শ্যামনগরের প্রাণকেন্দ্রে সিদ্দিক উকিলের বাড়ি ভাড়া নিয়ে এক আনাড়ি মহিলা প্রেগন্যান্ট কেয়ার নামের অ্যাব্রর্শন সেন্টার করেন, অবাধে সেখানে অ্যাব্রর্শন করছে। কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে এক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি।’ শুধু আবেদন করেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি ভুল হয়েছে। শ্যামনগরের কোনো প্যাথলজিতে নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এ ছাড়া যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে, তারাও বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন না করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালাক বলেন, জেলার ১৩০টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশির ভাগেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নজরদারি করতে পারছি না। তবে দ্রুত অবৈধভাবে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন জানান, জেলার সব কটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের লাইসেন্স নবায়ন নেই বা লাইসেন্স নেই, তাদের যথা শিগগিরই লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স করতে বলা হয়েছে। তারা নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত