ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কালিয়াকৈরে শিলাবৃষ্টিতে তছনছ বাড়িঘর-ফসলের মাঠ

কালিয়াকৈরে শিলাবৃষ্টিতে তছনছ বাড়িঘর-ফসলের মাঠ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত শনিবার রাতে হঠাৎ দুই দফায় ঝড়ো হাওয়া ও ভয়াবহ শিলাবৃষ্টিতে এক রাতে তছনছ হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বাড়িঘর ও গবাদি পশু রাখার ঘরের টিনের চাল ফুটো হওয়ায় বিপদগ্রস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। অপরদিকে আম ও লিচুর মকুল, কাঁঠাল, মাঠের বোরো ধান, কলাবাগানসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে গ্রামের পর গ্রামের কৃষকের মাথায় হাত। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত শনিবার রাতে হঠাৎ দুই দফায় ঝড়ো হওয়া ও ব্যাপক শিলাবৃৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার তারাবির নামাজ ও রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ। রাত পৌনে ১০টার দিকে শুরু হয় ঝড়ো হওয়া ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। আবারও রাত ১টার দিকে আঘাত হানে ঝড়ো হাওয়া ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। বসত-ঘরের টিনের চালা ফুটো হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে ছোট-বড় শিলা। এর সঙ্গে ছিল বৃষ্টির পানিও। আতকে উঠেন ঘুমন্ত মানুষ। মুহূর্তের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বাড়িঘর, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। কেউ কেউ ঘরের চৌকি, আবার কেউ কেউ টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নেন। নষ্ট হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক লাইন, ঘরের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন গ্রামের পর গ্রামের মানুষ। দুই দফায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আঘাতের কবলে পড়ে উপজেলার বহেড়াতলী, গাছবাড়ী, সোনাতলা, কাথাচুড়া, চাবাগান, ঠেঙ্গারবান্দ, বোয়ালী, বর্মণপাড়া, ফুলবাড়িয়া, পাবুরিয়াচালা, বড়ইবাড়ী, কুটামনি, ডাকুরাইল, কোন্দাঘাটা, পিপড়াসিট, গোলুয়া, ঢোলসমুদ্রসহ বিভিন্ন গ্রাম। এই ঝড় ও ভয়াবহ শিলা বৃষ্টির কবলে পড়ে এসব গ্রামের গরু রাখার ঘর ও গবাদি পশুও। শুধু তাই নয়, ভয়াবহ শিলাবৃষ্টিতে আম ও লিচুর মকুল, কাঁঠাল, মৎস্য খামার, মাঠের বোরো ধান, কলাবাগানসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে গ্রামের পর গ্রামের কৃষকের মাথায় হাত বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, কৃষকের এমন অবস্থায়ও কোনো খোঁজখবর রাখেনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। অপরদিকে এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পর থেকে বৈদ্যুতিক লাইন ত্রুটি হয়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে এসব গ্রাম। ফলে বন্ধ রয়েছে রাইস মিল, মশলা গুড়ার মেশিন, ফ্রিজ, অনেকের মোবাইল ফোনসহ বৈদ্যুতিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র। ঠেঙ্গারবান্দ এলাকার সাংবাদিক ইমারত হোসেন জানান, হঠাৎ করে রাতে দুই দফায় ঝড় ও ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে আমার ৮০ হাত ঘরের টিনের চাল নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমার নয়, গ্রামের বিভিন্ন লোকের ঘরের চালা ফুটো হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ টিনের চাল বদলাতে হবে। টিন না বদলালে কোনো লোক তাদের ঘরে বসবাস করতে পারবেন না। তবে এই শিলাবৃষ্টিতে জনগণের লাখ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। স্থানীয় এক ইউপি সদস্য মহসিন মিয়া বলেন, ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। মাটিতে শিলার স্তূপ জমে গিয়েছিল। এরকম শিলা বৃষ্টি এর আগে কখনো দেখি নাই। অপর ইউপি সদস্য মফিজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু গ্রামে ঘরের টিনের চাল ঝাজড়া হয়ে গেছে। এছাড়া গ্রামের পর গ্রামের মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে মৎস্য খামারীরাও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের সুপাভাইজাররা জানিয়েছে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সব গ্রামের কৃষকের খুব ক্ষতি হয়নি। কিন্তু চাবাগান গ্রামে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্যাপক ক্ষতি হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত