শ্যামনগরে যত্রতত্র পশু জবাই

নীরব প্রশাসন

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

শ্যামনগরের কমপক্ষে ৫০টি জায়গায় কোনো প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই জবাই হচ্ছে পশু। প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় মূল্য নির্ধারণ করেন মাংস বিক্রেতারা। কয়টি স্থানে পশু জবাই হয় জানে না প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই অবাধে গবাদিপশু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সদরসহ প্রায় ৫০টির মত জায়গায় এসব পশু জবাই করছেন ব্যবসায়ীরা। জবাই করা পশুর শরীরে কোনো রোগ-বালাই রয়েছে কি না, এমন কোনো ধারণাও রাখেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। আইনপ্রয়োগের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ ও প্রশাসনের হলেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ ছাড়া প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় মূল্য নির্ধারণ করেন মাংস বিক্রেতারাই। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা সদরের শ্যামনগর বাজারে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও প্রতিদিন কয়েক স্থানে পশু জবাই হচ্ছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ, ভেটখালী, নওয়াবেকী, কাশিমাড়ী, নুরনগর, জয়নগর, গোবিন্দপুর, খানপুর, পরাণপুর সহ প্রতিদিন অন্তত ৩০টি গরু, ৪০টি ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। প্রতিটি গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। উপজেলা সদরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান, মিজান ও সাবের নওয়াবেকী বাজার এলাকার বাসিন্দা মিন্টু বলেন, পশু অসুস্থ নাকি সুস্থ ছিল, তা-ও জানেন না তারা। নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র এবং পশুর শরীরে সিল দেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় লোকজন মৃত্য পশুর মাংস, নাকি রোগাক্রান্ত গরু মহিষ, ছাগল-ভেড়ার মাংস খাচ্ছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া অন্যান্য বাজারে যখন গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে উপজেলা সদর এলাকায় মাংস ওজনে কম দেওয়াসহ বিক্রয় হয় ৭০০ টাকায়। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় হচ্ছে এসব বেচাকেনা। গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ছাড়পত্র আছে কি নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে মাংস ব্যবসায়ী ফজর আলী বলেন, ‘বেশির ভাগ গরু ভালো থাকায় ছাড়পত্র নেওয়া হয় না। আর মাংসের দাম স্যারেরা না আসার কারণে আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করে থাকি।’ এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জনের নম্বরে কল করে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমত পুরো উপজেলাজুড়ে পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। আর প্রতিদিন পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মতো জনবলও আমাদের নেই। যদি পশু জবাইয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করা হয়, তাহলে সঠিক নিয়মে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।’ শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো: নজিবুল আলম বলেন, ‘পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এটি প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কসাইদের মধ্যে সমন্বয় করে নেওয়ার বিষয়। যদি নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই না করার কারণে পরীক্ষা করতে সমস্যা হয়। তাহলে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কসাইদের মধ্যে সমন্বয় করে জবাইয়ের এক দিন আগে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র নিয়ে রাখতে পারে। আর পশুর মাংস বিক্রয়ের সময় বেশি মূল্য নিচ্ছে এই বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা খবর নিয়ে দেখছি, যদি এমন কোনো বিষয় থাকে তাহলে অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়া পশু জবাইয়ের বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হোসাইন সাফায়েত বলেন, ‘অসুস্থ পশুর মাংস মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। পরীক্ষা ছাড়া অসুস্থ পশু জবাই করে বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি যত দ্রুত জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এর একটা সমাধান করব।’