ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিরলে পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে কৃষকের সাফল্য

বিরলে পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে কৃষকের সাফল্য

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায় দিগন্তনজোড়া পেঁয়াজের খেত। এক বিঘা, দুই বিঘা নয়, ১১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের খেত করা হয়েছে। দুই থেকে আড়াই ফুট লম্বা গাছের সবুজ কাণ্ডে গোলাকৃতির সাদা সাদা ফুল বাতাসে দুলছে। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন কোনো শিল্পী সবুজ চাদরে সাদা রঙের ফুলের ছবি এঁকেছেন। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন। বিশাল আয়তনের এই পেঁয়াজখেত দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজবীজের চোখজুড়ানো এই খেত মিলন ইসলাম ও কলোনী কান্ত রায়ের। তিন বছর ধরে তারা পেঁয়াজবীজসহ নানা ধরনের কৃষিপণ্যের বীজ উৎপাদন করছেন। এর মধ্যেই এসব বীজ উৎপাদন করে তারা লাভ হযেছেন। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। পেঁয়াজবীজের খেত ঘুরে দেখা যায়, ১৪ জন শ্রমিক খেতের পরিচর্যা করছেন। খেতের এক প্রান্তে ফসলের নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে টংঘর। মিলন জানালেন, গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ছয় শতাধিক বেডে (প্রতিটির প্রস্থ ১২ ফুট) পেঁয়াজের কন্দ রোপণ করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বীজ উত্তোলন করবেন। এবার সাড়ে পাঁচ একরে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ১০-১৫ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা আশা করছেন। ধান-আলু-ভুট্টাসহ শাকসবজি আবাদ করেন। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে বর্গার টাকা পরিশোধ ও সংসার চালাতে তার হিমশিম অবস্থা। মিলন জানান, তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। ২০২১ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তার বাবাকে মসলাসহ উচ্চমূল্যের ফসল চাষের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হয়। বাবার পরিবর্তে অংশ নেন মিলন। সেখানে জানতে পারেন, পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের আদ্যোপান্ত। অধিক পরিশ্রম হলেও পেঁয়াজবীজে মুনাফা বেশি। মিলন সিদ্ধান্ত ও চ্যালেঞ্জ নিতে দেরি করেননি। একদিকে ইউটিউব ঘাঁটতে শুরু করেন, অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। একপর্যায়ে ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক ভিডিও দেখতে দেখতে মিলন ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষক শাহিদা বেগমের খোঁজ পান। যিনি পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মিলন ও কলোনি কান্ত ফরিদপুরে যান। সেখানেও প্রশিক্ষণ নেন। এলাকায় ফিরে এসে তারা তাদের থাকা পাঁচটি গরু বিক্রি করেন। সেই টাকাসহ জমানো কিছু টাকা দিয়ে ২০২২ সালে শাহিদার কাছ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজের কন্দ নিয়ে আসেন। প্রথমবারই পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়াজ লাগান। সেবার সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে বীজ পেয়েছেন ২২ মণ। প্রতি মণ বীজ ৩৬ হাজার টাকা দর হিসেবে প্রায় ৮ লাখ টাকার বীজ বিক্রি করেছিলেন। বীজ বিক্রির ক্ষেত্রেও তারা শাহিদা বেগমের সহযোগিতা পেয়েছেন। প্রথমবারেই তারা পেঁয়াজবীজ বিক্রি করে চার লাখ টাকা লাভ করেন। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনাজপুরে স্থানীয় ক্ষুদ্র পেঁয়াজচাষিরা সাধারণত বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বীজ কিনে চারা উৎপাদন করতেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত