ঈশ্বরদীতে অলস সময় পার করছেন বেনারশি পল্লির কারিগররা

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ঈশ্বরদী বেনারশি পল্লিতে ঈদের কর্ম ব্যস্ততা নেই। একসময়ের প্রাণচাঞ্চল্যে বেনারশি পল্লির কারিগররা এবার ঈদ মৌসুমেও অলস সময় পার করছেন। দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধি ও দেশের বাজারে ভারতীয় শাড়ি সয়লাব হওয়ায় এবার বেনারশি শাড়ির চাহিদা কমেছে। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা শত বছরের পুরোনো ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারশি পল্লি ঈদ এলেই তাঁতের খটখট শব্দ আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পথচারণায় মুখরিত হয়ে উঠত। তবে এবার ঈদে ফতেহমোহাম্মদপুর এলাকার চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। পৌর শহরের অবাঙালি অধ্যুষিত বেনারশি পল্লি ফতেহমোহাম্মদ এলাকায় কারিগরদের কাজের তৎপরতা নেই। ঈদকে ঘিরে বেনারশি পাড়ায় কোনো প্রাণচাঞ্চল্য নেই।

বেনারশি তাঁতের মহাজনরা জানান, এখানে একসময় ৪৫০টি বেনারশি কারখানা ছিল। হাজার হাজার কারিগর এ কাজে জড়িত ছিল। এখন মাত্র ৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। ভারতীয় নিম্নমানের শাড়িতে দেশীয় বাজার সয়লাব ও দফায় দফায় সুতা, চমকিসহ তাঁতসামগ্রীর দাম বাড়ায় লোকসানে পড়ে অনেকেই বেনারশি তাঁত শিল্প থেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিচ্ছেন। দক্ষ কারিগরের নিখুঁত বুননের জন্য এখানকার তাঁতের তৈরি বেনারশি শাড়ির ব্যাপক কদর ছিল। করোনা মহামারির পর দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট ও দেশীয় বাজারে ভারতীয় শাড়ির প্রভাবে বেনারশি পল্লি এখন হুমকির মুখে। ফতেহমোহাম্মদপুর লোকোসেড এলাকার শোভা সিল্কের কারিগর আব্দুল করিম জানান, আগে ঈদ এলেই দিনরাত কাজ করতে হতো।

এখন আর সেই দিন নেই। আগে শাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল এখন বাজারে ভারতীয় শাড়ি ঢুকে পড়ায় আমাদের শাড়ির চাহিদা কমে গেছে। ক্রেতারা শাড়ির মান এখন আর দেখে না তারা মেশিনে তৈরি মানহীন ভারতীয় শাড়ি বেশি কিনছে। ক্রেতারা বুঝতে চায় না আমাদের হাতে বুননের শাড়ির মান-গুণ সবই ভালো। শামীম বেনারশির কারিগর জাহিদুল ইসলাম বলেন, ৩৫ বছর ধরে বেনারশি পল্লিতে তাঁতের কারিগর হিসেবে কাজ করছি। এবারের ঈদের মতো খারাপ সময় আগে কখনো দেখেনি। বেনারসি শাড়ি বেচাকেনা একেবারেই নেই। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এসবের মূল কারণ হচ্ছে ভারত থেকে অবাধে নিম্নমানের শাড়ি আসছে।

এতে দেশি শাড়ির বাজার নষ্ট হচ্ছে। মদিনা বেনারশির স্বত্বাধিকারী সেলিম হোসেন বলেন, ২২টি তাঁতের মধ্যে এখন মাত্র ৫টি চলছে। ঈদে শাড়ির কোনো চাহিদা ও অর্ডার নেই। আগে এখানকার শাড়ি টাঙ্গাইল ও ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ীরা কিনতেন। এবার ঈদে তারা কোনো অর্ডার দেয়নি।

আমার মতো অন্য মহাজনদেরও একই অবস্থা। জাবেদ অ্যান্ড ব্রাদাস বেনারশি শাড়ির শো-রুমের স্বত্বাধিকারী জাবেদ হোসেন বলেন, ঈশ্বরদীর বেনারশি শাড়ির চাহিদা এখন কমে গেছে। আমাদের শো-রুমে বেনারশি শাড়ি থাকলেও তেমন বেচাকেনা নেই। ভারত থেকে আমদানি করা শাড়ি বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। ঈশ্বরদী বেনারশি তাঁতি সমিতির সভাপতি ওয়াকিল আলম বলেন, প্রতিবছর ঈদে বেনারশি শাড়ির যে চাহিদা ছিল এবার তার ৬০ ভাগ নেই। এখানকার বেশিরভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। কারিগরদের তৈরি বেনারশি শাড়ির গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। তাই দাম ভারতের শাড়ির চেয়ে বেশি। কিন্তু শাড়ির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কারিগররাও এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।