চিনির দাম বৃদ্ধি

জৌলুস হারাতে বসেছে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ.এইচ.এম.আরিফ, কুষ্টিয়া

চিনির দাম বৃদ্ধির কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু তিলের খাজা শিল্পটি। এক সময় কুষ্টিয়ার সুস্বাদু তিলের খাজার খ্যাতি জেলার সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) স্বীকৃতিও পেয়েছে এটি। তবে বর্তমানে ভাটা পড়েছে এই শিল্পে। জৌলুস হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই ক্ষুদ্র শিল্পটি। তারপরও টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন তিলের খাজা ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অনটন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে এ শিল্প।

তিলের খাজার প্রধান উপকরণ তেল, চিনির দাম বৃদ্ধির কারণে এই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হচ্ছে বলে জানান কারখানা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এই ব্যবসার অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। একটা সময় সদর ও কুমারখালী উপজেলায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল কয়েকশ’ পরিবার। শত বছরের এই খাদ্য পণ্যটি এখন ক্ষুদ্র শিল্পে রূপ নিয়েছে। কুষ্টিয়ার মাটি ছাড়িয়ে এটি এখন অন্য জেলায়ও তৈরি হচ্ছে। তবে ঠিক কবে থেকে এ তিলের খাজার উৎপাদন শুরু হয় এর সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। সাধারণত কুষ্টিয়ায় ৩ ধরনের তিলের খাজা তৈরি হয়। তিল ভেদে প্রকার নির্ণয় করা হয়। কারখানায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিলের খাজা তৈরি হয়। চিনি ও তেল স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হলেও তিল কেনা হয় চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে। তবে ভালো মানের তিল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়। সাধারণ তিলের খাজা ১৮০ ও স্পেশাল তিলের খাজা ৩৫০ টাকা কেজি এবং এক প্যাকেট ২০ টাকায় বিক্রি হয়। একটি কারখানায় ২৫-৩০ জন কারিগর কাজ করে থাকেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, শীত মৌসুমে এর আলাদা কদর রয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা সৃষ্টি করা হলে শিল্পকে আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এজন্য সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রসার ঘটছে না এই ক্ষুদ্র শিল্পের। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় দু’টি তিলের খাজা তৈরির কারখানা আছে। এরমধ্যে জয়নাবাদ এলাকায় একটি অপরটি মিলপাড়ায়। জয়নাবাদের কারখানা মালিক আফিল উদ্দিন বলেন, আগে শতাধিক পরিবার এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন আমার কারখানায় কাজ করছে মাত্র ২৬-৩০ জন শ্রমিক। সার্বিক সহায়তা পেলে এ শিল্পকে আরো শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. এহতেশাম রেজা বলেন, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা আমাদের জন্য গৌরবের। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে এরইমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তিলের খাজা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদের নিয়ে একটা সেমিনারের আয়োজন করেছি। এই সেমিনারে ব্যবসায়ীদের সামনে আগানোর যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলো শুনে তারপরে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে ঋণের ব্যবস্থাও করা হবে। কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক আশানুজ্জামান বলেন, কুষ্টিয়ার এই ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে কুষ্টিয়ার বিসিক প্রায় ৪০-৫০ বছর ধরে জড়িত আছে। কারখানার মালিকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হয় আমাদের। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।