ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঐতিহ্যের অপূর্ব নিদর্শন ৪০০ বছরের চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদ

ঐতিহ্যের অপূর্ব নিদর্শন ৪০০ বছরের চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদ

সময়ের পরিক্রমায় বাংলা অঞ্চলে আসা বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও দৃষ্টিনন্দন কিছু কাজের ছাপ রেখে গেছেন, যা পরবর্তীতে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছে। মোগল আমলের তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়া গোধা গ্রামের ‘চাঁদগাজী ভূঁঞা জামে মসজিদ’। মসজিদের দেয়ালে লেখা নির্মাণ সাল অনুযায়ী এ স্থাপত্যের সময়কাল ৪০০ বছরেরও বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদটির এক সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে মাঝখানের গম্বুজটি আকারে বড়। মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গম্বুজের ওপর পাতা ও নানা নয়নাভিরাম নকশা করা হয়েছে। দরজার ওপরে রয়েছে টেরাকোটার নকশা। মসজিদের সামনের অংশে শ্বেতপাথরের নামফলকে ফারসি ও আরবি ভাষায় নানা বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্মাণকাল ১১২ হিজরি লিখে শেষে একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট, উচ্চতা ৩৫ ফুট ও চারপাশের দেওয়াল চার ফুট পুরু। ২৮ শতক জায়গার ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি মধ্যযুগীয় রীতি অনুযায়ী চুন, সুরকি ও ক্ষুদ্র ইট দিয়ে তৈরি। মসজিদের ছাদে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য বড় গম্বুজ এবং চারকোণায় ও মধ্যে রয়েছে উঁচু ও সরু আকারের আরো কয়েকটি গম্বুজ। জানা গেছে, মোগল আমলের প্রখ্যাত ব্যক্তি চাঁদগাজী ভূঁঞা ছিলেন বাংলার বারো ভূঁঞাদের একজন। তার নাম অনুসারে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাচীন এ মসজিদে এখনো নিয়মিত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। মসজিদের অবকাঠামোও প্রায় একই রকম রয়েছে।

প্রাচীন এ মসজিদের চারপাশের দেওয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুনিপুণ কারুকার্য। মসজিদের মূল গেট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন মসজিদে প্রবেশের সময় মাথা নিচু করে প্রবেশ করতে হয়। এ গেটের দক্ষিণ পাশে রয়েছে উপরে উঠার সিঁড়ি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সেখানে উঠে পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মসজিদে প্রবেশের জন্য মোগল স্থাপত্য নিদর্শনে তৈরি কারুকার্যখচিত দরজাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরবর্তীতে কাঠের দরজা লাগানো হয়েছে। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে চাঁদগাজী ভূঁঞার কবর। কবরটি পাকাকরণ হয়নি। মসজিদের সীমানার দুপাশে রয়েছে কবরস্থান। ঐতিহাসিক চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদটি ১৯৮৭ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের গেজেটভুক্ত হয়। ১৯৯২ সালে প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে মসজিদের কিছু অংশের সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে মসজিদের কিছু সংস্কার কাজ হয়েছিল বলে মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে। তারপর থেকে অযত্নে পড়ে রয়েছে কালের সাক্ষ্য বহনকারী এ স্থাপনা। হাফেজ জাবের নামে চাঁদগাজী ভূঁঞার এক বংশধর বলেন, মসজিদটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত