ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মধু আহরণ উদ্বোধনের আগেই সুন্দরবনের মধু লাপাত্তা

মধু আহরণ উদ্বোধনের আগেই সুন্দরবনের মধু লাপাত্তা

প্রতি বছর ১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মধু সংগ্রহ। এবার ও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে মৌসুম শুরুর আগেই চোরা মধু শিকারীরা তৎপর হয়েছে। প্রতিদিন রাত সুন্দরবেনে ঢুকে মধু চুরি করছে মধু। বনবিভাগ সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় বিস্তীর্ণ সুন্দরবন অবস্থিত হলেও মূলত বেশি মধু সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে। এ কারণে প্রায় ২০০ বছর যাবত সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অনুষ্ঠান করে প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ করতে যান মৌয়ালরা। আর তা চলতে থাকে ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনের মধু ফুলখ্যাত খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়।

আর ওই সময় মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জেলেরা গোপনে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ফলে মৌয়ালরা বনবিভাগের অনুমতি নিয়েও প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে পারেন না। এ কারণে মৌয়ালরা জানান, অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে মধু সমংগ্রহর অনুমতি দিলে মধু বেশি পাওয়া সম্ভব।

কারণ কিছু বন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় চোরা মধু আহরণকারীরা বনে প্রবেশ করে মধু চুরির ফলে সময় মতো মধু মিলছে না। মুন্সীগঞ্জ এলাকার কিছু মৌয়াল জানান, মুন্সীগঞ্জ টহল ফাঁড়ি কর্মকর্তার সাথে রয়েছে কিছু চোরা মধু আহরণকারীর যোগাযোগ সে কারণে কিছু চোরা মধু আহরণকারী আগে ভাগেই সুযোগ নিয়ে বনে প্রবেশ করে অবৈধ ভাবে মধু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী চোরা মধু আহরণ কারীকে ধরে মুন্সীগঞ্জ টহল ফাঁড়িতে হস্তান্তর করলেও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন হচ্ছে না। দাতনেখালী গ্রামের মৌয়াল সুবির জানান, সুন্দরবনে সবচেয়ে ভালো মানের মধু পাওয়া যায় খলিশা ফুল থেকে। বসন্তের শুরুতেই সুন্দরবনে খলিশা ফুল ফুটতে শুরু করে। এরপর ফোটে গরান ও অন্যান্য ফুল। মানের দিক থেকে খলিশা ফুলের মধুর পরই গরানও অন্যান্য ফুলের মধু। মৌসুমের একেবারে শেষে আসে কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার রবিউল জানান, সুন্দরবনের মধুর মধ্যে খলিশা ফুলের মধু খুবই সুস্বাধু ও সুমিষ্টি।

এ কারণে খলিশা ফুলের মধু বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিশ্বজুড়ে খলিশা ফুলের মধুর চাহিদা রয়েছে বেশি। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাছুদুল আলম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। আর ওই সময় মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে জেলেরা গোপনে মধু সংগ্রহ করে। প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন মধু সংগ্রহকারীরা। তিনি জানান, মৌয়ালদের অনুরোধে এ বিষয়ে বনবিভাগকে অবগত করা হয়েছিল কিন্ত বন বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বনবিভাগ সূত্র জানা যায়, গত বছর মধু ও মোম আহরণের জন্য ১ হাজার ১২টি অনুমতিপত্র বা পাস দেয়া হয়েছিল। এসব পাসের বিপরীতে ৬ হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য যান। ওই সময় মৌয়ালরা ৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন মধু ও ১১৩ দশমিক শূন্য ৯ মেট্রিক টন মোম আহরণ করেন। এ ব্যাপরে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন অফিসার ফরেস্টার হাবিবুল আলম জানান, এবার জাকজমক করেই মধু সংগ্রহ অনুষ্ঠান হবে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা এসিএফ ইকবাল হোসাইন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুল আগে ফুটছে। ফলে মধুও আগে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্ত যথা সময়ে এবার মধুর সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত