বিলাশপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

পুলিশ মোতায়েনের মধ্যেও থামছে না বোমা বিস্ফোরণ

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীয়তপুর প্রতিনিধি

কিছুক্ষণ পরপরই মুহুর্মুহু ককটেল বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে জাজিরার বিলাশপুরের কয়েকটি গ্রাম। সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। একদিক পুলিশ থাকলে অপর দিক থেকে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ককটেল ফাটিয়ে হামলা ভাঙচুর করা হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ওইসব এলাকার নারী-শিশুসহ অসুস্থ সাধারণ মানুষ। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী চেয়ারম্যান সমর্থকদের চলমান সংঘর্ষের সময় এভাবেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় ৮/১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও কয়েকজন আহত হলেও সর্বশেষ গত বুধবার রাত ১০টার দিকে ককটেল বোমার আঘাতে সজিব নামে এক যুবকের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত সজিব মুন্সী (২৫) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী মুন্সীর ছেলে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার করতে বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাজিরা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য জলিল মাদবরের সঙ্গে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আধিপত্য বিস্তার করতে প্রায় সময়ই হঠাৎ করে দুই পক্ষের সমর্থকরা মুহুর্মুহ ককটেলের শব্দে পুরো ইউনিয়ন কাঁপিয়ে তোলে। গত মঙ্গলবার সকালে মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামের দুই চাচাত ভাই জমি জমার বিরোধ নিয়ে মারামারি করে। বিকালে ওই মারামারি আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খবর পেয়ে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের কয়েকটি টিম ওই এলাকায় টহলে থাকলেও বুধবার সন্ধ্যা থেকে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মিয়াচান মুন্সি কান্দি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাদবর ও মামুন মাদবরের বাড়িসহ অন্তত ১০টি বাড়ীতে ভাংচুর-লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। এ সময় ককটেলের আঘাতে সজিব মুন্সী নামে একজন গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে নিয়ে যায়। সজিব মুন্সীর পেটের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার ররাতের ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হলেও তারা পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে থেকেই চিকিৎসা নেয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।

স্থানীয় আব্দুর রহিম বলেন, বিলাশপুরে কুদ্দুস চেয়ারম্যান ও জলিল মাদবর গ্রুপের সংঘর্ষ একবার শুরু হলে টানা কয়েকদিন পর্যন্ত চলতে থাকে। বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষেরই থামার নজির নেই। একটানা কয়েক দিন ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা ভীত হয়ে পড়ে। প্রশাসন আরো কঠোর অবস্থানে না গেলে এই দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামবে না। বিলাশপুরের সংঘর্ষের বিষয়ে জলিল মাদবর বলেন, গত মঙ্গলবার জমি নিয়ে দুই চাচাত ভাইয়ের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পরে কুদ্দুস বেপারীর লোকজন ককটেল বোমা নিয়ে আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এ সময় একজনের হাতও ভেঙে যায়। গত বুধবার রাতে কুদ্দুস বেপারী নিজে তার লোকজন নিয়ে এসে বোমা মারে। বোমার আঘাতে আমার সমর্থক সজিব নামের একজনের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। আমি ঢাকায় আছি, এ ঘটনায় আমি মামলা দায়ের করব। বিলাশপুর ইউয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, বিলাশপুরের মহর খার কান্দি দোকানে বসে আমার পাঁচ থেকে ছয়জন লোক চা পান করছিল। এমন অবস্থায় জলিল মাদবর গ্রুপের একদল লোক বোমা নিয়ে তাদের ধাওয়া দিতে গিয়ে সজিব বোমা নিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে তার হাতে থাকা বোমা বিস্ফোরণ হয়ে আহত হয়েছে। গতকালকেও আমার সমর্থক গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে বোমা মেড়ে লুটপাট করেছে জলিলের লোকজন। বোমার আঘাতে আহত গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। এ রকম আরো ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। বিলাশপুরের প্রতিনিধি আমি। এই ইউনিয়নে মারামারি হলে আমার তো কোনো লাভ নেই। আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য জলিল মাদবর পুরো এলাকায় ত্রাস করে আমার উপর মিথ্যা দোসারোপ করছে। শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, বিলাশপুরে ককটেল বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়েই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনটি টিম মোতায়েন করেছি। দ্রুত পুলিশ মোতায়ন করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হওয়ার সুযোগ ছিল। অভিযোগ দায়ের হলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।