ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হারাতে বসেছে নেত্রকোনার ৮৫ নদ-নদী

হারাতে বসেছে নেত্রকোনার ৮৫ নদ-নদী

কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে নেত্রকোনার ৮৫টি নদ-নদী। কোনো কোনো নদ-নদীর তলদেশে হচ্ছে ধানের চাষ। বালু ও পলি জমে নদ-নদীসমূহের তলদেশ স্ফিত হয়ে ওঠা ও দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সুযোগ বুঝে একশ্রেণির লোক কোনো নদ-নদীর দুই পাড়, এমনকি কোনো কোনো নদীর মাঝখানে গড়ে তুলেছেন ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পাহাড়, নদী ও হাওর-বাঁওড় পরিবেষ্টিত জেলা নেত্রকোনা। এ জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় মোট ৮৫টি নদ-নদী। সব নদ-নদীই ছিল খরস্রোতা।

সারা বছর ধরেই টইটুম্বুর থাকত পানিতে। পাল তোলা নৌকা ছাড়াও লঞ্চ, স্টিমার ও কার্গো জাহাজ চলাচল করতো ওইসব নদিপথে। পরিবহন খরচ কম হওয়ায় নদিপথে নৌযানে তাদের মালামাল পরিবহন করতেন বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী। এছাড়াও নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা নদী থেকে পানি সেচে তাদের হাজার হাজার একর জমিতে ফসল উৎপাদন করতেন। এসব নদ-নদীসমূহের অধিকাংশই ভরাট হয়ে সমতল ভূমির সাথে একাকার হয়ে গেছে। তলদেশ স্ফিত হয়ে ওঠায় কোনো কোনো নদ-নদীতে চলছে চাষাবাদ। ঢল ও বৃষ্টির সাথে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও পলিতে নদ-নদীসমূহের বিভিন্ন অংশ ভরাট ও চর জেগে ওঠায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। একই কারণে নাব্যতা হারাতে বসেছে জেলায় বর্তমানে সচল নদ-নদীসমূহের কোনো কোনোটি। জেলার ৮৫টি নদ-নদীর মধ্যে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা হাতেগোনা কয়েকটি নদ-নদী, যেমন- কংস, ধনু, মগড়া, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, ধনাইখালি প্রভৃতির বাইরে অন্য কোনো নদ-নদীর নাম জানে না। ভরাট হয়ে যাওয়া বা ভরাটের পথে থাকা নদ-নদীসমূহকে জান বা নিচু জমি মনে করেন তারা। এমন নদ-নদীসমূহ হচ্ছে- আত্রাখালী, কাওনাল, কাকুরিয়া, কানসা, কানাই, কালিয়ারা, কালিহর, কর্ণ বালজা, কালা পানি ঝরা, গুনাই, জলকান্দি, জল শিমুলকান্দি, জারিয়া, তেওড়াখালী, ধলাই, ধোপখলা, ধুপিখালী, নিতাই, বাউরী, ছিলা, তুষাই, বল, বলী, বালই, বেদুরী, বানোয়ারী, বারুণী, বালিয়া, বাঁকহারা, বিষনাই, বেতাই, মরা সুরমা, নয়া নদী, পাতকুড়া, পিয়াইন, সিনাই, রাজেশ্বরী, ধলেশ্বরী, পাটেশ্বরী, ফুলেশ্বরী, লাউয়ারী, সুতি, সুরিয়া, সাইঢুলি, সোনাই প্রভৃতি।

কেন্দুয়া উপজেলার কলেজের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম আসিফ বলেন, এলাকার প্রবীণদের কাছে অনেক নদ-নদীর নাম শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ নদীর প্রকৃত রূপ কখনো দেখিনি। তিনি আরো বলেন, বিলীন হয়ে যাওয়া নদ-নদির ভূমি সরকারের সম্পদ। এ সব ভূমির অধিকাংশ বেদখল হয়ে গেছে। বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধার করে লিজ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। নেত্রকোণার মদন উপজেলার মগড়া নদী ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের পেছন ও নায়েকপুর ইউনিয়নের চন্দ্রতলা গ্রামের সামনে দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে পাশের উপজেলা কেন্দুয়ার সাইডুলি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ ছাড়াও ধলাই নদী ছত্রকোনা গ্রামের পিছন দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে তিয়শ্রী ইউনিয়নের সাহিতপুর গ্রামের পিছনের মগড়া নদীতে মিলিত হয়েছে। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহল ছত্রকোনার পেছনের অংশসহ বিভিন্ন অংশ যে যার মতো দখলে নিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে ধান চাষ করেছে। এতে পানি সঙ্কটে পড়েছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে যে, চর জেগে উঠা, শুকিয়ে বা বিলীন হয়ে যাওয়া নদ-নদি সমূহ লুটেপুটে খাচ্ছে দুইপারের বাসিন্দারা। তারা নদীর জায়গা দখলে নিয়ে চাষাবাদ করছে। কেউবা নদীর বুকে নির্মাণ করেছে ঘরবাড়ি। কলমাকান্দার উব্দাখালি (উফদাখালি) নদির বুক দখল করে অটো রাইসমিল স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো নদী থেকে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান বলেন, ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে তিনটি নদী ও বেশ কয়েকটি খাল খননের কাজ চলমান রয়েছে। আরো ২৪টি খাল খননের প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, যে সব নদ-নদী ও খাল খননের প্রয়োজন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তার একটি তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। নদীর জায়গা থেকে সব ধরনের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত