শেরপুরে চিচিঙ্গা চাষ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠছে না তাদের। বাজারে চিচিঙ্গার দাম অনেক কম থাকায় পাইকাররাও কিনছেন না। জমি থেকে চিচিঙ্গা তুলতে শ্রমিকের টাকাও ঘর থেকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ফলে অনেক চাষি খেত থেকে চিচিঙ্গা তুলে ফেলে দিচ্ছেন। ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদি গ্রামের চাষি আব্দুল মজিদ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাংক ও এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়ে চিচিঙ্গার আবাদ করেছি। বাজারে চিচিঙ্গার দাম নেই। কিস্তির টাকা পরিশোধ করব কীভাবে। তিনি আরো বলেন, এ বছর সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বাড়লেও বাজারে চিচিঙ্গার দাম না পেয়ে কমে গেছে। বাজারে যে দাম তাতে খেতের সবজি তুলতে শ্রমিকের মজুরিও হবে না। অনেক কৃষক খেতের ফসল না তুলে খেতে ফেলে রেখে চলে গেছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়াতে পারব না। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারিকালিনগর এলাকায় গজারমারি বিলসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নে চিচিঙ্গা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং খেতে তেমন কোনো রোগ ও পোকাণ্ডমাকড়ের আক্রমণ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চিচিঙ্গা বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। প্রতি বছর এই সময় পাইকারি বাজারে চিচিঙ্গার কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থাকলেও এ বছর একই সময় বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকায়। এতে লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠছে না বলে দাবি কৃষকদের। বাজারে চিচিঙ্গার দাম কম থাকায় পাইকাররা শুধু দাম বলে চলে যাচ্ছেন। ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সারিকালিনগর এলাকার চিচিঙ্গা চাষি খোরশেদ আলম বলেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরে গজারমারি বিলে চিচিঙ্গা চাষ করছি। প্রতি বছরই চিচিঙ্গা চাষ করে লাভবান হই। এ বছরও প্রায় এক একর জমিতে চিচিঙ্গা চাষ করেছি। খেতে কোনো পোকাণ্ডমাকড়ের আক্রমণ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম পাচ্ছি না। একদিকে চিচিঙ্গা বিক্রি করতে পারছি না, অন্য দেনার টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদারা তাগিদ দিচ্ছেন। আমাদের খেতের চিচিঙ্গা তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। ফলন বেশি হওয়ায় চিচিঙ্গা না তুলে মাচা ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। একই উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সারিকালিনগর এলাকার চাষি মো. সামিউল হক জানান, গত বছর এই সময় পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চিচিঙ্গা বিক্রি করে ৩০-৩৫ টাকা পেতাম। কিন্তু এ বছর একই সময় পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকারও উঠছে না। এ বছর আমি তিন একর জমিতে চিচিঙ্গা আবাদ করেছি। কৃষকরা বলেন, চিচিঙ্গা তুলে তুলে রাস্তার ধারে পাইকারের আশায় রেখে দিলেও পাইকারের দেখা মিলছে না। এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে ২০ হেক্টর জমিতে চিচিঙ্গা চাষ হয়েছে। খেতে পোকাণ্ডমাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। ঝিনাইগাতীর চিচিঙ্গা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। যে সব উদ্যোক্তা চিচিঙ্গা বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে লাভবান হতে চান, তারা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। যথাযথ পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।