দেশের অত্যান্তু গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক গুলোর মধ্যে একটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন মহাসড়কের সাতটি ফ্লাইওভার খুলে দেওয়াসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মহাসড়কের ওপর অবাধে চলছে হাটবাজার, চোরাই ইটবালু ব্যবসা ও অবৈধ থ্রি-হুইলার। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও উচ্ছেদ করা না হলে ঈদযাত্রা স্বস্তির সকল প্রস্তুতি ম্লান হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিক, যাত্রীসহ স্থানীয় লোকজন।
সরেজমিন ঘুরে সড়ক সংশ্লিষ্ট ও পরিবহন শ্রমিক-যাত্রীসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম একটি মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১২২টি সড়কের যানবাহন চলাচল করে। ফলে এ মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়কে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারও বলা হয়। একসময় নাকাল অবস্থায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতেন উৎসবমুখর ঘরমুখো মানুষ। অনেকেই যানজটে আটকে ঈদের নামাজেও শরিক হতে পারতেন না। আবার এ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতের মনে হলেও দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন যাত্রীরা। চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ছিল একই অবস্থা। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন অনেকটা স্বস্তির মহাসড়ক দুটি। কিন্তু বছরে দুটি ঈদ, দুর্গাপূজাসহ বড় ছুটির সময়ে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে এখনো মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শিল্পকারখানা একত্রে ছুটি হলে মহাসড়কে চাপ বৃদ্ধি পেয়ে যানজট আরো দৃঢ় হয়। এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির লক্ষ্যে গত ২৪ মার্চ বিভিন্ন মহাসড়কের সাতটি ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ারপোর্ট, জসীমউদ্দিন, ইউটার্ন-১ গাজীপুরা, ইউটার্ন-২ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ভোগড়া, চৌরাস্তা ফ্লাইওভার। এসব ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল করছে। এছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগ, হাইওয়ে, জেলা ও থানা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশ নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান করলেও মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড়, বোডঘরসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভারের নিচে এবং ফুটপাতসহ মহাসড়ক দখল করে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে বসছে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট ও হাটবাজার। এছাড়া খাড়াজোড়া, কালিয়াকৈর বাইপাস, শ্রীফলতলী, হিজলতলী, সূত্রাপুর, বোডঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের ওপর প্রায় অর্ধশত চোরাই ইটবালু স্পট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেট চক্ররা প্রশাসনকে মাসোয়ারা দিয়ে মহাসড়কের ওপর এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অপর দিকে মাসোয়ারা দিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, সিএনজি, মাহিন্দ্রসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহনের ইচ্ছা মতো মহাসড়কের ওপরেই রয়েছে তাদের অবৈধ ষ্টেশন। ফলে প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, আবার অনেকেই হয়েছেন পঙ্গু। নিঃস্ব হয়েছেন তাদের অনেকের পরিবার। কিন্তু তারপরও ভ্রাম্যমাণ দোকাটপাট, হাটবাজার, চোরাই ইটবালু ও থ্রি-হুইলার সিন্ডিকেট চক্র প্রতিদিন সব মিলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওই টাকা ভাগ যাচ্ছে কিছু অসাধু পুলিশ, সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পকেটেও। ফলে মহাসড়ক ঘিরে প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায় অপরাধ সংঘঠিত হলেও সংশ্লিষ্টরা যেন নিরব দর্শক। এছাড়া যেখানে সেখানে যত্রতত্র গাড়ি পাকিং, যাত্রী উঠানামা করানোসহ যানজটের সৃষ্টির অন্যতম কারণ। আর এসব কারণ এখনো চলমান থাকায় এবার ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কারণগুলো সমাধান করা না হলে সংশ্লিষ্টদের স্বস্তিতে ঈদযাত্রার সকল প্রচেষ্টা ও প্রস্তুতি ম্লান হবে বলেও মনে করছেন পরিবহন শ্রমিক, যাত্রী ও স্থানীয় লোকজন। পথচারী ও যাত্রী আয়েশা আক্তার, আলমগীর হোসেন, লাল মিয়া, সাদ্দামসহ অনেকেই বলেন, প্রশাসনের লোকজন যত যাই বলুক, যানজট লাগবেই।
যানজট ছাড়া কোনো ঈদে আমরা বাড়ি যেতে পারি না। পিকআপ চালক নুর ইসলাম, পিপলু হোসেন, বাস চালক মোখলেজ মিয়া, তজু মিয়াসহ অনেকে বলেন, মহাসড়কের ওপর হাটবাজার, ইটবালু ব্যবসা করায় প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। এছাড়া আমাগো লগে পাল্লা দিয়ে আগে যাচ্ছে অটোরিকশা সিএনজি। ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট লেগে যায়।
প্রতি বছরই মতো এবারও বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে উল্লেখ করে নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন জানান, এ মহাসড়কের সাড়ে ৬ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ যানজট এলাকায় ৩২টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। তবে ঈদকে ঘিরে ফুটপাত দখলমুক্ত, রং পার্কিং গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া থ্রিহুইলার, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ইটবালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
সম্প্রতি ওই মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রায় ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানান ঢাকা রেঞ্জের হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, গতবার ড্রোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও এবার আরো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এবার টকিং ড্রোন ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি থাকছে বডি লাইভ ক্যামেরা যা সরাসরি হেড অফিসে চন্দ্রা কন্ট্রোল বক্সের মাধ্যমে মহাসড়ক নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, ঈদকে ঘিরে মহাসড়কের যানজট নিরসনে এরই মধ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যাতে যানজট না থাকে সে বিষয়ে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।