পাবনার সাঁথিয়ায় খাল-রাস্তা সংস্কারের অভাবে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে বছরের পর বছর। এলাকাবাসীর দাবি, খালটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ ও অথবা একটি সেতু নির্মাণ করে দেয়ার। খাল সংস্কারের আশ্বাস সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের। জানা গেছে, উপজেলার নাগডেমড়া ইউনিয়নের ছোট পাতাইলহাট গ্রামের ছোট বেড়িবাঁধের পাশে কাশেম খাঁর বাড়ি থেকে মতিনের বাড়ির মাঝখানে খালটিতে একসময় কালভার্ট ছিল। কালের আবর্তে কালভার্টটি ভেঙে গেলে সেখানে বিশাল খালের সৃষ্টি হয়। ফলে চলাচলের জন্য বেড়ি বাঁধ থেকে নাগডেমড়া বাজার সড়কের ওই খালের ওপর এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়েই পাঁচণ্ডছয়টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন দীর্ঘবছর ধরে। বর্ষা এলে বাড়ে দুর্ভোগ। ঝড়-বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে নড়বড়ে সাঁকো পারাপার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নাগডেমড়া ইউনিয়নের পাথাইলহাট গ্রামের মাঝখানে ওই খাল পারাপারের জন্য আশপাশের কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। দীর্ঘ বছর ধরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই খাল পারাপার হতে হয়। সাঁকোর বাঁশ নষ্ট হলে এলাকার লোকজনই কিছুটা সচ্ছল গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিজেদের উদ্যোগে সাঁকোটির সংস্কার ও পূণঃর্নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এই পথে নাগডেমড়া, ছোটপাথাইলহাট, বড় পাথাইলহাট, সেলন্দাসহ পাঁচণ্ডছয়টি গ্রামের স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কৃষাণ-কৃষাণী, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওই সাঁকো পারাপার হচ্ছেন। খালটি ভরাট করে অথবা খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় স্থানীয় কৃষকদের ধানসহ কৃষিপণ্য পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহণ সম্ভব না হওয়ায় উভয় পাড়ের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাশের হাটবাজারে নিতে কষ্ট হয়। খালের পাশে অত্র এলাকার একটি মাত্র বড় মসজিদ। আশপাশের মুসল্লিদের বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে রাতে দিনে ঝুঁকি নিয়ে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা খালের ওপারে নাগডেমড়া বাজার সড়কের সাথে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য খালটিতে মাটি ভরাট করে রাস্তা অথবা একটি সেতু নির্মাণ করে দেয়ার, যাতে করে অনায়াসে নাগডেমড়া বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করতে পারে। ওই এলাকার একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সাঁকো পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। কোনো কিছু সঙ্গে নিয়ে পার হতে গেলে অনেকে প্রায়ই পানিতে পড়ে যায়। মসজিদের তারাবি নামাজ আদায় করতে আশা মুসল্লিরা জানান, রাতে নামাজ পড়তে এসে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পাড়াপারে জীবনমৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা কাশেম খাঁ, আব্দুল মতিন, নজরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান জানান, এই খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু-রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না। এই খালের ওপর সেতু না থাকায় আমাদের অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের দাবি, খালটির ওপর যেন দ্রুত একটি পাকা সেতু অথবা মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘খালটি সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমাকে যে প্রকল্পের অর্থ দেয় তা যৎসামান্য। তা দিয়ে কিছু হবে না। আমি আমার চেয়ারম্যান মহোদয়কে বলেছি। তিনি এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।’ নাগডেমড়া ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ দুর্ভোগের বিষয় স্বীকার করে জানান, ইনশাআল্লাহ এ বছর জুনেই একটা প্রকল্প দিয়ে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করে দেয়া হবে। যাতে ওই এলাকার মানুষ সহজেই স্কুল, কলেজে ও বাজারে যেতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি সরেজমিন যাব ওই রাস্তায়। ওই সড়ক যদি এলজিডির হয় সেক্ষেত্রে ওখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।