কেশবপুরে তীব্র দাবদাহের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)
যশোরের কেশবপুরে রমজানে মাসে ইফতারি, তারাবির নামাজ ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলে অভিযোগ। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপদাহে কেশবপুর পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কেশবপুর শহরের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, মুসলমানদের সব থেকে বড় উৎসব দুই ঈদ। রমজানের চাঁদ উঠলেই কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। বছরের দুটি বড়ো উৎসবের একটি আগাত ঈদুল ফিতর অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন বাজারে আসছে না।
তারপর বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ইফতারি, তারাবির নামাজ ও সেহরির সময় হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আর আসে তারাবি নামাজ শেষ হলে। ফলে রোজাদার মানুষের ব্যাপক কষ্ট ভোগ করতে হয়। স্থানীয় বিদ্যৎ অফিস সূত্র জানায়, কেশবপুর উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ২৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৪ মেগাওয়াট। ফলে রাত দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্য মাত্র ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাছে গ্রাহকরা। আর লোডশেডিং থাকছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা।
এদিকে ওই ৯০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে কৃষকের বৈদ্যুতিক সেচ সংযোগ রয়েছে প্রায় ১ হাজর ১০০টি। উপজেলার বাগদহা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান, আবদুল জলিল মোড়ল, সুমন হোসেন, হাফেজ কাওছার আলী সরদার, প্রতাপপুর গ্রামের ইজ্জত আলী, এরশাদ আলী সরদার, জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, রমজান মাসে ইফতারি, তারাবি নামাজ ও সেহরির সময় আসলে বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে রোজাদারের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। প্রচণ্ড গরমে নামাজ আদায় করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কেশবপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস গ্রাহকদের সাথে লুকোচুরি খেলছে। অপর দিকে চলতি বোরো মৌসুমে নিরবছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় কৃষকরা তাদের বোরো খেত ঠিকমত সেচ দিতে পারছে না।
এর ফলে তাদের ধানের খেত শুকিয়ে যাছে। যে টুকু সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সেচ মটর চালিয়ে রাখলেও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ জমিতে সেচ দেয়া যায়। অথচ এক একটি সেচ পাম্পের আওতায় ২০ থেকে ৩০ বিঘা পর্যন্ত জমি রয়েছে। এতে চলতি বছর এ উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় থাকলেও বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোডশেডিং ও গত কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপদাহে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্থিরতা। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ না পেয়ে একটু প্রশান্তির আশায় মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছে গাছ তলায়। বিশেষ করে এখন পবিত্র মাহে রমজান মাস। মুসলমানদের সিয়াম ও সাধনার মাসে ইফতারি ও তারাবির নামাজের সময়ও বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকছে। এতে করে রোজাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান কেশবপুর উপজেলায় দিন ও রাত ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে বলে গ্রাহকরা জানান। গ্রাহকরা আরো বলেন, এদিকে ঠিক মতো বিদ্যুৎ থাকছে না। অথচ একটু বিল বাকি পড়লেই তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। আবার সংযোগ নিতে গেলে জরিমানার টাকা না দিলে সংযোগ হয় না।
এদিকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকার কারণে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদেশি গরু ও ব্রয়লার মুরগি হিট স্টোকে মারা যাচ্ছে বলে জানান। তাদের খামারে সব সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করে থাকেন। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফলে খামারের গরু ও ব্রয়লার মুরগি খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীনে রয়েছে বলে জানান। এছাড়া তীব্র তাপদাহর কারণে এলাকার পুকুর ও মৎস্য ঘরের পানি অতিরিক্ত গরম হয়ে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ফলে লাকসানের আশঙ্কা করছেন মৎস্য ও খামার ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বলছে, ৩৩ কেভি ও নওয়াপাড়ার লাইনে সমস্যা হয়েছে। আবার বলে যশোরের মূল অফিসের সমস্যা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায় চলে আসবে আশা করা যাচ্ছে। কেশবপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম এস শাহীন আলম বলেন, যশোরের মূল অফিসের সমস্যা হয়েছে। যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১৪ মেগাওয়াড। রামপাল ও বরিশাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সাভাবিক পর্যায় আসবে না।