লালমনিরহাটের আদিতমারীতে ‘ছাগল চোর’ বলায় অপমানের প্রতিশোধ নিতে পাঁচ বছরের শিশু রোমানকে ‘শ্বাসরোধ করে’ এবং ‘ঘাড় মটকে’ হত্যা করে চৌদ্দ বছর বয়সি আরেক কিশোর আশিকুর। গত সোমবার তাকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি। কিশোর আশিকুর রহমান ওই উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের মুছা মিয়ার ছেলে। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের সেতুর বাজার এলাকার মোবাইল ও কম্পিউটার দোকানদার আমিনুর ইসলামের শিশু পুত্র রোমান তার বাবার দোকানে থাকা অবস্থায় নিখোঁজ হয়। পরদিন দুপুরে ওই বাজারের পাশের একটি তামাক ক্ষেত থেকে শরীরের অর্ধেক অংশ মাটিতে পোতা অবস্থায় শিশু রোমানের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং এ আরো জানানো হয়, আশিকুর রহমান বিভিন্ন ধরনের চুরির অপরাধের সাথে জড়িত। ঘটনার এক মাস আগে আশিকুর স্থানীয় মোকসেদুল এর মায়ের একটি ছাগল চুরি করে হাটে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। চুরি করার সময় ভিকটিম রোমান দেখে ফেলে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকায় সালিশি বৈঠকও হয়। সালিশি বৈঠকে আশিকুরকে অভিযুক্ত করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তারপর থেকে মৃত রোমান আশিকুরকে দেখতে পেলেই ছাগলচোরা, ছাগলচোরা বলতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে আশিকুর ভিকটিম রোমানকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আশিকুর ঘটনার দিন গত শুক্রবার বিকালে রোমানকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তার সাথে বিভিন্ন ভাবে সখ্যতা তৈরি করে খেলাধুলা করতে থাকে। এক পর্যায়ে আশিকুর রোমানকে পাশের তামাক খেতে নিয়ে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে এবং ঘাড় মটকে হত্যা করে। তারপর রোমানের শরীর তামাক খেতের দুই সারির মাঝে ড্রেনের মধ্যে শুইয়ে কিছু তামাক পাতা এবং মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখে। গ্রেপ্তারকৃত আশিকুর আদালতে হত্যাকাণ্ডের কারণসহ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিষয়ে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। এর আগে, গত শুক্রবার বিকালে আমিনুরের দুই ছেলে আসিফ মিয়া ও রোমান হোসেন দোকানে বেড়াতে যায়। আমিনুর তাদের ওই দোকানের কম্পিউটারে কার্টুন ভিডিও দেখতে দিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যান। ওইদিন বিকালে তিনি বাড়ি হতে দোকানে এসে দেখেন যে, তার ছোট ছেলে রোমান দোকান ঘরের মধ্যে নেই। পরবর্তীতে তিনি পাশের দোকানদার শ্রী ভগো চন্দ্র রায়কে ও বড় ছেলে আসিফ মিয়াকে ছোট ছেলের কথা জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানায় যে, একটু আগে কোথায় যেন গেল। পরবর্তীতে ইফতার শেষে আমিনুর তার দোকান ঘরে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী দোকানে এসে বলে, ‘আমার ছোট ছেলে রোমান হোসেন কেন বাড়িতে যায় নাই সে কোথায়’।
তখন আমিনুর সহ স্থানীয় লোকজন রোমানকে আশপাশের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। তাকে কোথাও না পেয়ে একপর্যায়ে আমিনুর তার খোঁজে এলাকায় মাইকিং করেন। এরপর গত শনিবার দুপুরে সেতু বাজারের পাশে অনেক চিৎকার শুনে কৃষক মজমুল হকের তামাক ক্ষেতে গিয়ে তার ছেলেকে তামাক পাতা ও কিছু মাটি দ্বারা চাপা অবস্থায় মৃত দেখতে পান। স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে আদিতমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রোমানের লাশ উদ্ধার করে। প্রেস ব্রিফিং এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোর আশিকুরকে এরইমধ্যে পুলিশ যশোর কিশোর শোধনাগারে পাঠিয়েছে।