মুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল। এই অঞ্চলে সুলতানি ও মোঘল আমলের অসংখ্য মুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। দিনাজপুরের নয়াবাদ মসজিদ তেমনি একটি প্রাচীন মুসলিম নিদর্শন। দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদের ভিন্নতা হলো, এর জমি দান করেছিলেন একজন হিন্দু জমিদার এবং নির্মাণ করেছিল আরব (সম্ভবত মিসরীয়) কারিগররা। ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। জেলা সদর থেকে ২০ কিমি. উত্তর-পশ্চিমে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে এর অবস্থান। ১.১৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। মুসলিম স্থাপত্যের দর্শনীয় প্রাচীন এ মসজিদটি একনজর দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারও পর্যটক। স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকে আসা বিভিন্ন বয়সি মানুষের আনাগোনা থাকে বছরজুড়ে। মসজিদের প্রবেশদ্বারের ওপর ফারসি ভাষায় স্থাপিত ফলক হতে জানা যায়, সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময় ২ জ্যৈষ্ঠ, ১২০০ বাংলা সনে (১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ) মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদের নির্মাণ সম্বন্ধে জনশ্রুতি অনুযায়ী আঠারো শতকের মধ্যভাগে পশ্চিমা দেশ থেকে আগত মুসলিম স্থাপত্যকর্মীরা নয়াবাদ গ্রামে মোকাম তৈরি করেন এবং সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের উত্তর পাশে তৎকালীন মিস্ত্রিদের কবর রয়েছে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি আয়তাকার। এর চারকোণায় রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.৫ মিটার। দেওয়ালের প্রশস্থতা ১.১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলান। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দু’টি জানালা রয়েছে। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। দুই পাশের মিহরাব দু’টি অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের তিনটি অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি অন্য দু’টির তুলনায় কিছুটা বড়। মসজিদের চার কোণের কর্নার টাওয়ারের মধ্যে ২টির ওপর কুপলা রয়েছে। বাকি দু’টির ওপরে ছোট গম্বুজ। দেওয়ালজুড়ে আয়তাকার বহু পোড়ামাটির ফলক এবং ফলকগুলোর মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা ছিল। এরকম ১০৪টি আয়তাকার ফলক রয়েছে। তবে ফলকের মধ্যে অলংকরণের অনেকটাই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। পোড়ামাটির নকশাগুলো বহু জায়গায় খসে পড়েছে। ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী হাসিমুন নাহার ঘোরার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, নয়াবাদ মসজিদটি দেখার অনুভূতি খুবই আনন্দের। মসজিদটি অতি দর্শনীয় ও শৈল্পিক। সব মিলিয়ে নয়বাদ মসজিদ দেখে আমি বিমোহিত। খানসামা থেকে আসা দর্শনার্থী শাহ্ মো. রজব আলী বলেন, আমি প্রথম নয়াবাদ মসজিদটি দেখতে আসলাম। দেখে অনেক ভালো লাগল। স্থানীয়দের কাছে নয়াবাদ মসজিদের ইতিহাস শুনলাম। ইতিহাস শুনেও অনেক কিছু জানতে পারলাম। নয়াবাদ মসজিদের খতিব হাফেজ মো. জাহিদ হাসান বলেন, প্রতি শুক্রবার এই মসজিদের বারান্দায় মুসল্লিতে পূর্ণ হয়। বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সারা বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।