বর্ষবরণে এবার আলপনার রঙে রঙিন হয়েছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়ক। যা বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা অঙ্কন বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখানোর জন্যও আবেদন করবেন তারা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলপনায় বৈশাখণ্ড১৪৩১ উৎসব’। গত রোববার পহেলা বৈশাখে সকাল সাড়ে ১০টায় মিঠামইন জিরো পয়েন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তুলির আঁচড়ের মাধ্যমে আলপনায় বৈশাখ উৎসবের সমাপ্তি করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। জানা যায়, গত শুক্রবার বিকাল ৪টায় এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়কে আলপনা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় আলপনা উৎসব ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’। গত রোববার সকালে এ আলপনা অঙ্কন শেষ হয়। অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রামের ১৪ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়কে প্রায় ৭০০ শিল্পীর তুলিতে বৈশাখের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং একই সঙ্গে বিশ্বরেকর্ড গড়ার অনবদ্য প্রত্যয় নিয়ে শেষ হলো এ উৎসব। এ অঞ্চলের মানুষ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আলপনা দেখতে এসেছেন দর্শনার্থীরা। হাওরের গৃহবধূ নিঝুম আফরোজ বলেন, আমাদের বৈশাখ মানে ধান ঘরে তোলার আনন্দ। তবে এবারের বৈশাখে আলপনার রঙে রঙিন হলো আমাদের অলওয়েদার সড়ক। এতে আমাদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘুরতে আসা ব্যাংকার মাসুদুর রহমান বলেন, অসাধারণ অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট থেকে ঘুরতে আসছি। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি ইতিহাসের সাক্ষী হতে। মুজাহিদ সরকার নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, হাওরের এই অলওয়েদার সড়কটি এমনিতে সারাদেশে ভাইরাল। এবার এখানে আলপনা অঙ্কন করায় হাওরে আরও পর্যটক আসবে। এতে হাওরের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদী বলেন, চারদিকে সবুজে ঘেরা, মাঝখানে এ আলপনা যা মনোমুগ্ধকর। ১৪ কিলোমিটারব্যাপী এ আলপনা বাংলাদেশকে বিশ্বে উপস্থাপন করবে। আমি সবাইকে বলব আপনারা আসেন। এসে উপভোগ করুন এ চমৎকার দৃশ্য। বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যময় সব উৎসব উদযাপনে বাংলালিংক গভীরভাবে দায়বদ্ধ। দেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব পহেলা বৈশাখ এসব উৎসবের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও দেশীয় উৎসবকে তুলে ধরার একটি প্রয়াস।’ বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আলপনায় বিশ্ব রেকর্ড গড়তে এ অংশগ্রহণ নিজেদের সামর্থ্যকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মাধ্যমে ইতিহাস তৈরিতে আমাদের উৎসর্গকে প্রকাশ করে। সামনের দিনগুলোতেও আমরা এমন রঙিন ও স্মরণীয় বৈশাখ পালন করতে আশাবাদী।’ এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইরেশ জাকের আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশব্যাপী বৈশাখের এ আয়োজনগুলো বাঙালি সংস্কৃতি ও সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। বাংলালিংক ও বার্জারের সঙ্গে যৌথভাবে ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’ আয়োজন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আলপনা উৎসবের সমাপনীতে অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর বিরতির পর পহেলা বৈশাখের আলপনার উৎসব আবার ফিরে আসায় বাঙালি চেতনার উদযাপন আবার তার চেনারূপ লাভ করেছে। আয়োজকদের প্রতি আমি শুভকামনা জানাচ্ছি ও আশাবাদ ব্যক্ত করছি যেন তারা ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন করে দেশবাসীকে আনন্দে ভাসাতে পারেন। এ আয়োজন ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবে।’