মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচু গাছ। মুকুলের ঘ্রাণে প্রতিটি গাছ এখন মৌমাছির গুঞ্জরণে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা। যেখানে লিচু ফলের মধু আহরণের ধুম পড়েছে বাগানগুলোতে। এই দৃশ্য লিচুর জন্য বিখ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবার দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানের লিচু গাছে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌয়ালরা এসেছেন মধু সংগ্রহ করতে। এ বছর জেলার বিভিন্ন লিচু বাগান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন মধু সংগ্রহ করা হবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মধু সংগ্রহ করতে প্রায় ১১০০ মৌয়াল এসেছেন বিভিন্ন লিচু বাগানে। সারিবদ্ধ বাগানের নিচে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা। সরেজমিন দিনাজপুর সদরের কিষাণ বাজার, পাঁচবাড়ী, মাসিমপুর, শেখপুরা, উলিপুর, বিরলের মাধবাটি, ঝুকুরঝাড়ি, কাশিডাঙ্গা, খানসামার সনকা, কাঁচিনিয়া, বীরগঞ্জের গোপালগঞ্জ, চিরিরবন্দরের মাদারগঞ্জ, পার্বতীপুরের আমবাড়ি, ফুলবাড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায় মধু সংগ্রহের চিত্র। বিভিন্ন বাগানে লিচু গাছের নিচে গোলাকার সারিবদ্ধ বাক্স বসিয়ে রেখেছেন মৌয়ালরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খামারিরা প্রায় ৯ হাজার মৌবক্স স্থাপন করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে গড়ে প্রতি বাক্স থেকে ১৫-২০ কেজি লিচু মধু উৎপাদন সম্ভব। সে হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন মধু দিনাজপুরে উৎপাদিত হবে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
মৌচাষি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, দিনাজপুর জেলায় যে পরিমাণ লিচু বাগান আছে, এটা যদি সুশৃংখল অবস্থায় গাণিতিক আকারে পরিচালনা এবং মৌখামারিদের সেভাবে বিন্যস্ত করা যায় তাহলে দিনাজপুর থেকে হাজার কোটি টাকার মধু আহরণের সম্ভাবতা রয়েছে।
এজন্য দিনাজপুরে একটি মৌ-গবেষণা স্থাপনেরও দাবি জানান। মৌচাষি আরমান সরকার বলেন, যদি আবহাওয়ার অবস্থা ভালো থাকে তাহলে আমি আশা করি ২৫০ মন মধু সংগ্রহ করতে পারব। মৌচাষি হাসান আলী বলেন, আমি বিসিকের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে মৌচাষ পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সিজনালি মধু সংগ্রহ করে থাকি। এবার আমি বিরল উপজেলার একটি লিচু বাগানে ৩০০ বাক্স নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি।
আমি প্রতি সাতদিন পর পর মধু সংগ্রহ করতে পারি। দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) উপ-মহব্যবস্থাপক মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, লিচু বাগানে মৌচাষ করে মৌচাষিরা যেমন মধু চাষ করে লাভবান হয়, অপরদিকে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ণ ঘটায় লিচুর ফলনও ২৫ ভাগ বেশি হয়। এতে বাগানিরা ও মৌচাষি উভয় লাভবান হবেন।