মনিরামপুরে নদীতে ভাসছে কচুরিপানা

গর্ভে জমছে পলি

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

যশোরের মনিরামপুরে উন্মুক্ত জলাশয়ে বিস্তরভাবে জন্মানো কচুরিপানা আর পলিমাটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভবদহ-সংলগ্ন চারটি নদ-নদী ও ৬২টি খালের সিংহভাগ এখন কচুরিপানায় পূর্ণ। জানা গেছে, ১৫০ বছর আগেও এই কচুরিপানাকে কেউ চিনত না। ইংরেজ শাসনামলে যেমন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে কচুরিপানার বিস্তার ঠেকাতে আইন প্রণয়নসহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে কচুরিপানার বিস্তার অনুরূপ ধারণ করছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

দেশের অঞ্চলভেদে শেওলা, কেউটে নামেও পরিচিত কচুরিপানা। নদ-নদী ও খাল-বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয় কচুরিপানায় পূর্ণ হওয়ায় পানিপ্রবাহে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কচুরিপানার সঙ্গে পলিমাটি একাকার হয়ে এসব জলাশয় ভরাট হয়ে চারণভূমিতে পরিণত হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত কচুরিপানা ও পলি অপসারণ না হলে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও রয়েছে। জলাশয়ে অধিকহারে জন্মানো কচুরিপানা নামে এ উদ্ভিদটি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) ভাবিয়ে তুলেছে। অবশ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কচুরিপানা ধ্বংসে উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মুক্তেশ্বরী, টেকাণ্ডহরি, হরিহর, শ্রী নামে চারটি নদী এবং ভবদহ-সংলগ্ন এ নদীর সাথে ৬২টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলার অভয়নগরের তিনটিসহ কেশবপুর প্রায় ১০টি এবং বাকি গজশ্রী, দহকুলা, ইত্যা, পলাশীসহ ৩৯টি খাল রয়েছে। এছাড়া খাটুরা, পারখাজুরা, ঝাঁপা ও খেদাপাড়া বাঁওড় রয়েছে। শংকর বিশ্বাস, নিরঞ্জন ধর, তপন বিশ্বাস, পরিমল বিশ্বাস নামে একাধিক জেলে জানান, কেউটের (কচুরিপানা) কারণে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অচিরেই এই আগাছা দূরীকরণে সমন্বিত ব্যবস্থা না নিলে এসব জলাশয় সম্পূর্ণ নাব্য হারিয়ে ফেলবে। এতে করে পলি আর কচুরিপানায় ভরাট হয়ে জলাশয় চারণভূমিতে রূপ নেবে।

সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে অধিকাংশ জলাশয় এ কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এসব কোনো জলাশয় নয়; যেন শুকনো চারণভূমি। কচুরিপানায় এসব জলাশয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জেগে উঠেছে চর।

কচুরিপানায় পূর্ণ হওয়ায় জলাশয়ে অক্সিজেন সংকটে মাছসহ জলজ জীব-বৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে এসব জলাশয় হতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে সম্প্রদায় বেকায়দায় পড়ছেন। খাটুরা বাঁওড়ের আলতাফ হোসেন, অধির ধর, রেজাউল ইসলাম, কার্তিক কন্ডু নামে একাধিক সদস্য জানান, বাঁওড়টি কয়েক বছর হলো কচুরিপানায় পূর্ণ রয়েছে। এ কারণে এবার বাঁওড়ের প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো খয়রা নামে বিশেষ প্রকৃতির মাছ কমে গেছে। কচুরিপানার আবর্জনায় বাঁওড়ের স্তর পড়েছে। এতে করে ভূ-গর্ভস্থ পানি না উঠায় এ খয়রা মাছ জন্মেনি। এদিকে, কচুরিপানা ও পলিমাটিতে নদ-নদী ও খালগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই জলাধারগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হলে গোটা এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।