রাজশাহীতে পানির স্তর নেমে বিশুদ্ধ পানির সংকট
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিজয় ঘোষ, রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ১৮ ভাগ টিউবয়েলে উঠছে না পানি। তবে বিশুদ্ধ পানির বিষয়ে রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন অতিরিক্ত পুকুর খননের জন্য পানির স্তর আরো দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে শত শত মানুষ মন্তব্য করেছেন। এরমধ্যে বুলবুল আহমেদ লিখেছেন, লিডার হয় পুকুর খনন বন্ধ করুন, না হয় প্রত্যেকটি বাড়িতে একটি করে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করুন। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আম বাগান চরে ৮৫টি পরিবার বসবাস করে। এই পরিবারের জন্য এডিপি খাতের এডিপি-পিআইসি প্যাকেজের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই মাস আগে একটি হ্যান্ড টিউবয়েল বসানো হয়। টিউবয়েলটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এখানে স্থানীয় এক বাগান মালিক নিজস্ব অর্থায়নে একটি টিউবয়েল বসিয়ে দিয়েছেন। এই টিউবয়েল থেকে তারা সবাই পানি সংগ্রহ করে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দুই মাস থেকে তারা পানির সংকটে পড়েছে। এই চরে ৪০০ মিটার দক্ষিণে একটি টিউবয়েল রয়েছে। এই টিউবয়েলের পানি সংগ্রহ করে সকলেই প্রাণ করে। এছাড়া আরো ১৫টি চরের মানুষের একই অবস্থা। পদ্মার মধ্যে ১৫টি চরে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ বসবাস করে। এছাড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৮০২টি সাব-মার্সেবুল ও হ্যান্ড টিউবয়েল বসানো হয়েছে। এরমধ্যে সাব-মার্সেবুল রয়েছে ৮৫১টি। পানি উঠছেনা ৫২৭টি হ্যান্ড টিউবয়েলে। এদিকে রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, তা হুবহু তুলে ধরা হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, তানোর-গোদাগাড়ি, পবা-মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া-দুর্গাপুর অঞ্চলে টিউবওয়েলের পানির স্তরের বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। দয়া করে কমেন্টে লিখবেন। চারঘাট-বাঘায় বেশ সমস্যা হচ্ছে। গভীর টিউবওয়েল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। অনান্য কারণের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুকুর খনন (যেখানে গভীর নলকূপ দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি তোলা হয়) পানির স্তর আরও দ্রুত নেমে যাবার অন্যতম কারণ বলে আমার মনে হয়। যাদের সাবমারসেবল দেয়া হয়েছে আশা করি তারা প্রতিবেশীদের পানি নিতে সহায়তা করবেন এই সময়ে। এতে মিলন সাহা নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় ১৭০-২০০ ফিট নিচে পানির লেয়ার। টিউবওয়েল অস্তিত্ব বহু বছর আগেই বিলুপ্ত, যেকোনো মোটর দিয়ে পানি উঠানো কষ্ট সাধ্য, পৌরসভার সাপ্লাই এর পানি একমাত্র ভরসা, সেই পানিও একদিন পর পর আসে। ভবিষ্যৎ পানির জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (কালিদাসখালী) মেম্বর শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার নির্বাচিত এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে টিউবয়েল থাকলেও পানি না উঠায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। উপায় নেই, এরমধ্যে কেউ কেউ পদ্মার পানি ব্যবহার করছে। আম বাগান চরের আলিয়া বেগম বলেন, নিজের বাড়িতে একটি টিউবয়েল আছে। পানি উঠছেনা। বাড়ির দক্ষিণে দূরে একটি টিউবয়ের থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করি। কোনো উপায় নেই, এ টিউবয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছি। একই কথা জানান চরের আরিফা বেগম, আক্তার জাহান, আবেদা বেগম ও সালেহা বেগম নামের কয়েকজন নারী। চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ডিএম বাবলু মনোয়ার দেওয়ান বলেন, পদ্মার ধার দিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ পরিবারের বাড়িতে টিউবয়েলে পানি উঠছে না। ফলে শত শত পরিবার বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে। কিছু কিছু পরিবার পদ্মার পানি পান করছে। আম বাগান চরে একটি সরকারিভাবে টিউবয়েল বসানো হয়েছিল। কিছুদিন পর সেটা অকেজো হয়ে গেছে। তবে সরকারিভাবে অতিশিগগিরই গভীর নলকূপের ব্যবস্থা না করলে পানির জন্য মহাসংকটে পড়বে। এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী মিঠন কুমার রবি দাস ও মেকানিক্র মাহাবুবুর রহমান বলেন, সাব-মার্সেবুলের কোনো সমস্যা নেই। হ্যান্ড টিউবয়েল বসানো হয়েছিল ২ হাজার ৯৫১টি। এর মধ্যে ৫২৭টি টিউবয়েলে বর্তমানে পানি উঠছেনা। সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সে মোতাবেক প্রায় ১৮ ভাগ টিউবয়েলে পানি উঠছেনা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, পানি সংকটের বিষয়ে প্রতিদিন আমাকে দুই/চারজন করে ফোন করে জানিয়ে সাব-মার্সেবুলের বিষয়ে আবেদন করছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।