টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌরউদ্যানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে পুলিশি বাঁধার মুখে কোনো গ্রুপই নির্ধারিত সময় ও স্থানে সমাবেশ করতে পারেনি। উভয় গ্রুপই পৃথক স্থানে সংক্ষিপ্ত সভা করেছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগের ‘ঈগল প্রতীকের’ সমর্থকরা সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে গতকাল টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌরউদ্যানে সমাবেশ আহ্বান করে। তাদের দাবি- যৌন নিগ্রহের মামলার আসামি শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনির গ্রেপ্তার ও বিচার।
অপরদিকে, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে একই দিন একই সময় একই স্থানে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর সমর্থনে ছিলেন বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনকারী ও তাদের সমর্থকরা। শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনি টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির ভাই। দুই গ্রুপই সমাবেশের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাইলে স্থানীয় প্রশাসন কোন পক্ষকেই শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান ব্যবহার করার অনুমতি না দিলেও উভয় পক্ষই সেখানে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেয়। গতকাল সকালে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা সংসদ সদস্য তানভীর হাসানের আদালত পাড়াস্থ বাসভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে। অপরদিকে, ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা পৌরসভা এবং থানা পাড়া এলাকায় জড়ো হয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ায় গতকাল সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ পৌরউদ্যান এলাকায় অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বাড়ির সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলে পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে তারা সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এতে সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনি, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য মামুন অর রশিদ, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বালা মিয়া, পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ ও আমিনুর রহমান আমিন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নাতি হাসরত খান ভাসানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, শান্ত টাঙ্গাইলকে অশান্ত করার মধ্য দিয়ে কিছু চক্রান্তকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা খুনিচক্রের ক্রিড়ানক হয়ে এই উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে। এদের প্রতিহত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন বক্তারা। অপরদিকে, একই সময় টাঙ্গাইল পৌরসভা ভবনের সামনে থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিচারের দাবিতে মিছিল বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পৌরসভা মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের নেতৃত্বে মিছিলটি পৌরসভা চত্বর থেকে রাস্তার নামার পরেই পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে তারা পৌর ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এতে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন ও মানবাধিকার কর্মী মাহবুদা শেলী। বক্তারা বলেন, গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে একাধিক যৌন নিগ্রহের মামলা রয়েছে। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানানো হয়। এর আগে গত বুধবার রাত পৌনে ১০টার দি?কে টাঙ্গাইল পৌরসভার সামনে, পৌর উদ্যান, ছয়আনী পুকুর পাড়, আদালতপাড়া, পুরাতন বাসস্ট?্যান্ড এবং থানাপাড়া এলাকায় বিকট শব্দে কয়েকটি কক?টেল বি?স্ফোরিত হয়। এতে শহ?রের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বাসিন্দারা জানায়, মোটরসাইকেল?যো?গে দুষ্কৃতকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে কক?টেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে এমন হ?তে পা?রে। পরে পুলিশ পৌরসভার সামনে থেকে কয়েকটি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, দুই পক্ষ একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় কোনো পক্ষকেই সমাবেশ না করতে দেওয়ার বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।