নওগাঁ সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ

মাদক ও চোরাচালান রোধে ব্যতিক্রম উদ্যোগ

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নওগাঁ প্রতিনিধি

ভারতের ভুলকিপুর এবং বাংলাদেশের খয়েরবাড়ি গ্রাম দুটি মাদক ও চোরাচালান প্রবণ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। এর একটাই কারণ সীমান্তের এই এলাকায় কাঁটাতারের কোনো বেড়া না থাকা। এতে সহজেই বিজিবি ও বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক কারবারিরা নিরাপদ রুট হিসেবে বলে ব্যবহার করে। তবে মাদক ও চোরাচালান রোধ করতে দুই দেশের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে শনিবার সকাল ১০ টায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার সীমান্তের কালুপাড়া বিওপি সীমান্ত পিলার ২৫৮/৫-এস হতে ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে খয়েরবাড়ি গ্রামের মাঠে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মাদক পাচারকারী/চোরাকারবারিদের অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘আলোকিত গ্রাম, আলোকিত মানুষ, আলোকিত সীমান্ত’ পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ গ্রহণ করে। জানা গেছে, মাদক ও চোরাচালান প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ভারতের ভুলকিপুর এবং বাংলাদেশের খয়েরবাড়ি। সীমান্তবর্তী গ্রাম দুটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারকারী এবং চোরাকারবারীদের উপদ্রব দেখা যায়। গ্রাম দুটি বিজিবি এবং বিএসএফ ক্যাম্প হতে কিছুটা দূরে অবস্থিত। সীমান্তের এই অংশে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় মাদক পাচার এবং চোরাচালানের রুট হিসেবে দুষ্কৃতকারীরা এই এলাকাকে নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। শুধু বিজিবি এবং বিএসএফ-এর নিরাপত্তামূলক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এই এলাকাকে মাদক ও চোরাচালানমুক্ত করা বেশ কঠিন। প্রয়োজন তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের বৃহত্তর সহযোগিতা করা দরকার। আরো প্রয়োজন উভয় দেশের স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ততা। সকল পক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে এ গ্রামের মাদক ও চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য দমিয়ে দেওয়া সম্ভব। যেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে বই খাতা। তাদের চোখণ্ডমুখ ভরা থাকবে রঙ্গিন স্বপ্ন। সীমান্তবর্তী কৃষক, বেকার ও সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার জন্য মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নয় বরং বেছে নিবে বিকল্প কোনো অর্থনৈতিক উপায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে সীমান্তবর্তী মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার এই যুগান্তকারী উদ্যোগে বহুমুখী কার্যক্রম নিয়ে ১৪ বিজিবি পাশে থাকবে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। পাল্টে দেবার প্রতিশ্রুতিতে খয়েরবাড়ি গ্রামটি হয়তো হয়ে উঠবে, বাংলাদেশের অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকার জন্য অনুকরণীয় মডেল গ্রাম। গ্রাম দুটিকে মাদক এবং চোরাচালান মুক্ত করতে বিজিবি-বিএসএফ এর অধিনায়ক পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়। এ এলাকাকে মাদক ও চোরাচালানমুক্ত করার কৌশল হিসেবে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করার ব্যাপারে যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দুই দেশের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের সীদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর পক্ষে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদেন পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মো: হামিদ উদ্দিন। অপরদিকে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট বিএসএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের পতিরাম ১৩৭ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ কমান্ড্যান্ট শুকভীর ধাংগার। দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্কের এই অনন্য নিদর্শনকে সামনে রেখে জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে এবং ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় অধিনায়ক দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। সভায় সীমান্তবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং সীমান্তে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে উভয় অধিনায়ক একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পতাকা বৈঠক শেষ হয়।