শ্যামনগরে ভুয়া ডাক্তাররের দৌরাত্ম্য

বিভিন্ন ডিগ্রি সংবলিত সাইনবোর্ড দিয়ে চলছে অবৈধ ক্লিনিক

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

শ্যামনগরজুড়ে ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারের দৌরাত্ম্য এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। বিভিন্ন বাহারি ডিগ্রি সংবলিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিরীহ রোগীদের প্রতারিত করছেন তারা। ফলে চিকিৎসাসেবায় চরম অরাজকতা বিরাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোগীদের জীবন। গত জুন পর্যন্ত দুই বছরে ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া ডাক্তারের কবলে পড়ে শ্যামনগরে ২০-২২ জন রোগীর করুণ মৃত্যু ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়েছে, অল্প সময়েই নিভে গেছে তাদের জীবন প্রদীপ। একটি তথ্যে জানা গেছে, শ্যামনগরে প্রায় ৫ শতাধিক ভুয়া ডাক্তার রয়েছে। তবে বাস্তবে বিএমডিসির দেওয়া পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি ভুয়া ডাক্তার দেশজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভুয়া ডাক্তারের পাশাপাশি জাল ডিগ্রিধারী ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের’ সংখ্যাও কম নয়। তারা এমবিবিএস পাসের পর নামের আগে পিছে দেশ-বিদেশের ভুয়া উচ্চতর ডিগ্রি ব্যবহার করে বছরের পর বছর রোগী দেখছেন, হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের ফি। ভুয়া ডাক্তার-দালালদের দৌরাত্ম্য, ভুল চিকিৎসা, অবহেলা আর চিকিৎসা বাণিজ্যের নির্মমতায় একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অর্ধ শতাধিক ভুয়া ডাক্তারকে আটক এবং তাদের জেল-জরিমানা করা হয়। সম্প্রতি সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতালের অনিয়মের কারনে সহকারী ভূমি কমিশনার অভিযান চালিয়ে নগত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ক্লিনিক বন্ধ করে দেন পরবর্তীতে আবার ও ম্যানেজ করে ক্লিনিক চালু করে। ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের কথা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসা সেক্টরে ভুয়া ডাক্তার ও অপচিকিৎসা ব্যবস্থাটি বছরের পর বছর ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতোই চেপে আছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার লক্ষ্যে বিএমডিসি ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। ভুল চিকিৎসার নির্মম বলি হয়েছে অসংখ্যা নারী পুরুষ, শিশু বিশেষ করে অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে ভুল চিকিৎসায় বেশী মৃত্যু বরন করছে। শ্যামনগরের ক্লিনিক গুলোর রয়েছে নিজস্ব দালার যারা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে কোন রকম পেট ব্যাথা শুরু হলে ঐসব দালাল রা খবর পেয়ে বিভিন্ন কৌশলে ক্লিনিকগুলোতে নিয়ে আসছে এবং ক্লিনিকগুলোর পরিচালকরা সাধারণত সকলে হাতুড়ে ডাক্তার তারা একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেন্টারে বলে দিচ্ছে বিভিন্ন জটিল রোগের রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সেভাবে তারা রিপোর্ট করে নিচ্ছে। সিজারের ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোতে বাচ্ছার বয়স যা-ই থাকুক আড়াইকেজির উপর বাচ্ছার বয়স করে রিপোর্ট দিতে সে অনুযায়ী রিপোর্ট করিয়ে নিয়ে সিজার করাচ্ছে। বাচ্চার ওজন কম থাকলেও আড়াই কেজি বা তার উপর দেখিয়ে সিজার করার কারণে মা ও শিশুর নানা রোগ সৃষ্টি হচ্ছে এমকি বাচ্ছা মারাও যাচ্ছে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে হাতুড়ে ডাক্তার হয়েও সাইনবোর্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে সর্বত্রই প্রতারণা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে অনেকে। শ্যামনগরের ক্লিনিকগুলোতে সাইনবোডে সোভা পাচ্ছে নামি-দামি ডাক্তারদের নাম আবার কোনো কোনো ডাক্তারদের সাইনবোডে ডিগ্রি রয়েছে এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য এফসিপিএস প্রথম পর্ব, শেষ পর্ব) ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্লিনিকের রয়েছে প্যাথলজি ক্লিনিক সেখানে ইচ্ছামতো রিপোর্ট তৈরি করেও নিচ্ছে। শ্যামনগরের বেশিরভাগ ক্লিনিক মালিকরা ভুয়া ডাক্তার বাণিজ্যের লক্ষ্যে ভুয়া ডাক্তাররা নামের পেছনে এফআরএসএইচ, এমএসিপি, এফআরসিপি, পিজিটি, এমডি ও এফসিপিএস (ইনকোর্স) ও পার্ট-১ অথবা পার্ট-২সহ বিভিন্ন ডিগ্রি উল্লেখ করে। দেশে ভুয়া ডিগ্রির অভাব নেই, টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে সব মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের জাল সনদপত্র। এটাও অজ্ঞ-অদক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টিতে দৃষ্টান্ত রাখছে বলে মনে করছেন বিএমডিসি কর্তৃপক্ষ। সামান্য কিছু টাকা খরচ করলেই যে কেউ হতে পারেন সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ডাক্তার। পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত থাকলেও চলবে। খরচের পরিমাণও নাগালের মধ্যেই।