নেত্রকোণার হাওরগুলোয় পুরোদমে বোরো ফসল ঘরে তোলার কাজ চলছে। জেলার খালিয়াজুরি, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলা হাওর অধ্যুষিত এলাকা। এর বাইরে আটপাড়া, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও নেত্রকোণা সদরসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোর নিচু এলাকায় চলছে বোরো ফসল কাটার ধূম। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। জানা যায়, হাওরাঞ্চলের কৃষকের আয়ের একমাত্র উৎস্য বোরো ফসল। এই ফসলের উপরই নির্ভর করে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ ও সন্তানাদির পড়া-লিখাসহ সাংসারিক অন্য সকল খরচ। তাই সারা বছর ধরে তারা এই ফসলের অপেক্ষায় থাকেন। পৌষ-মাঘে জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়। খরা, বণ্যা ও প্রাকৃতিক অন্যান্য দুর্যোগের কারণে কৃষকের মধ্যে ফসলহানীর আশঙ্কা বিরাজ করে সবসময়। চৈত্র মাসে আকাশে মেঘ দেখলেই তারা ভয়ে আঁতকে উঠেন- এই বুঝি ডুবল। এই পরিস্থিতিতে ভালোই ভালোই ফসল ঘরে না তোলা অবধি মসজিদণ্ডমন্দিরে চলে দোয়া ও প্রার্থনা। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। কৃষকরা যে কোনো উপায়ে তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। ধান কাটছেন উৎসবের আমেজে। পরিবারের সকল সদস্যই ধান কাটতে খেতে নেমে পড়েছেন। মহিলারা ধান সিদ্ধ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলছেন। বাদ যায়নি স্কুল-মাদ্রাসার শিশু-শিক্ষার্থীরাও। তারা বিভিন্ন উপায়ে পরিবারের বড়দের সাহায্য করছে। এছাড়া সরকারের ভর্তুকিমূল্যে দেওয়া ধান কাটা ও মাড়াই কলের মালিকরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তড়িঘরি ধান ঘরে তুলতে এসব কলের প্রতি কৃষকেরও আগ্রহ বেড়েছে। মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর গ্রামের কৃষক রব্বানি, মান্দারুয়া গ্রামের কৃষক রইছ উদ্দিন, শ্যামপুর গ্রামের কৃষক আবু তালেবসহ অনেকেই জানান, ফসল ভালো ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার হাওরাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে আনন্দ বিরাজ করছে। ঈদের পর পরই পহেলা বৈশাখ, এর পরপরই শুরু হয়েছে ধান কাটার কাজ। সবাই উৎসবের আমেজে ধান কাটছে, ফসল ঘরে তুলছে। মদন, খালিয়াজুরি প্রভৃতি উপজেলার কৃষকের মধ্যেও একই আমেজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নেত্রকোণার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন ধান। এই পরিমাণ ধানের সরকারি মূল্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। নেত্রকোণা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও কৃষকের নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বোরোর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। অতিতের মতো এবার ধান কাটতে সমস্যা নেই। জেলায় ৫৬০টি হারভেস্টার মেশিন প্রস্তুত অবস্থায় আছে। হাওরাঞ্চলে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। ধান কর্তনে হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কৃষকের অর্থ ও শ্রম দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এবার আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আগাম বন্যার আশঙ্কা নেই। বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকার কর্তৃক কৃষকের মধ্যে ভর্তুকিমূল্যে হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। এসব মেশিনে কম খরচে দ্রুততার সাথে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হাওরের সমস্ত জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।