বাগেরহাটে প্রচণ্ড খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে বাগানে বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না আম। আর এতেই আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। চাষিদের দাবি, ইতোমধ্যে অনেক বাগানে প্রায় ৩০ শতাংশ আমের গুটি ঝরে গেছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের মাস্টার রেজাউল আহসান ৮ বিঘা জমিতে বিগত ৭ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ করে আসছেন। তিনি জানান, তীব্র খরায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। চলতি মৌসুমে আমের মুকুল কম ছিল। তারপরও শুরুর দিকে ঘন কুয়াশা ও চৈত্রের বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুকুল। এরপর যে তীব্র দাবদাহ চলছে এতে করে গাছে আম ধরে রাখা অনেক কষ্টকর। শুধু মাস্টার রেজাউল আহসানই নন, এমন বৈরী আবহাওয়া আমের গুটি ঝরে পড়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার সব আম চাষি। আলিফ নার্সারির মালিক ও আম চাষি মো. আবুবকর বলেন, এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল দেরিতে এসেছিল, তারপর অসময়ের বৃষ্টিতে মুকুল ঝরে যায়। আর এখন বৃষ্টির অভাবে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। এমন দাবদাহ আর কিছুদিন অব্যাহত থাকলে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের। বৈরী আবহাওয়া আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আম উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। ফলে আমরা স্বস্তিতে নেই। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় প্রথম আম বাগানের উদ্যোক্তা মাস্টার রেজাউল আহসান জানান, বাগেরহাট জেলার সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় মোরেলগঞ্জে। কিন্তু এবার মোরেলগঞ্জেই আমের অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের চাষিদের আম বিক্রি করে কীটনাশক খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাগেরহাটে ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলমান রয়েছে। ফলে প্রচণ্ড তাপ ও খরায় বোঁটা শুকিয়ে আম ঝরে যাচ্ছে। এতে আম চাষিরা লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে খরায় আম ঝরে পড়া থেকে বাঁচতে অনেকেই গাছে পানি সেচ দিচ্ছেন। মোরেলগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে, কৃষি বিভাগ যে সাড়ে ১ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানায়, উপজেলায় অতিরিক্ত খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের পরামর্শ দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বছর মোরেলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২০৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার ১ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর উপজেলায় আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন।