কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর ইউনিয়নের ঘোড়াশাল গ্রামের মেটংঘর-শ্রীকাইল সড়কের পুরাতন ব্রিজের পাশের আর্সি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঁধ নির্মাণের ফলে চরম আকারে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমিতে সেচকাজ। ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিচ্ছে ওই ক্ষমতাধর প্রভাবশালী মহলটি। এতে করে হুমকিতে পড়েছে ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমি। এতে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ করে দেওয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বঞাচলে বি-বাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার একটি নদী আর্সি নদী। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিচিতি নাম্বার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল নদী নং-১। এটি বুড়ি নদীর একটি শাখা। যার নাম আর্সি নদী। এক সময় এ নদী দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী শত শত নৌকা এবং ট্রলার চলাচল করত। বর্তমানে একটি মাটিখেকোর সিন্ডিকেট নদীর মাঝে বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধের উপর দিয়ে প্রতিদিন ৮-১০টি ট্রাক্টর কৃষিজমির মাটি কেটে স্থানীয় সততা ব্রিকসের মাটি জোগান দিচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেটংঘর-শ্রীকাইল সড়কের পুরাতন ব্রিজের পাশের সততা বিক্র ফিল্ড নামক একটি ইটভাটা রয়েছে। সেই ইটভাটার মাটির জোগান দিতে নদীটির মাঝখান দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে কেটে নিচ্ছেন সোনাকান্দা-ঘোড়াশাল বিলের শত শত হেক্টর কৃষিজমি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, কৃষিকাজই আমাদের প্রধান পেশা। এ কাজ করেই আমরা জীবিকাণ্ডনির্বাহ করি। কিন্তু ভূমিখেকো ইটভাটার মালিকরা আমাদের এ রুটি-রুজিতে আঘাত করছে। এরা যেভাবে কৃষিজমি নষ্ট করছে, তাতে কিছুদিন পর আমরা আর জমি খোঁজে পাব না। প্রশাসন যদি এখনই কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে আমাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সততা ইটভাটা মালিক সহিদ মিয়া বলেন, আর্সি নদীতে মধ্যে বাঁধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে দিয়েছে কি না, আমি জানি না। আমরা শুধু কাজী আলম থেকে মাটি ক্রয় করি। আর্সি নদীতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি কাজী আলমই বিস্তারিত বলতে পারবে। ইটভাটায় মাটি দেওয়ার মালিক কাজী আলম বলেন, এই বাঁধটি কয়েক বছর থেকেই চলে আসছে। সততা ইটভাটায় আমি মাটি দিতাম; কিন্তু ২ দিন থেকে মাটি দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বাঁধ দেওয়া বিষয়টি অপরাধ, না অপরাধ বুঝি না! বাঁধ দিয়ে ইটভাটায় মাটি দেই সেটাই বলতে পারব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাবেল খান পাপ্পু বলেন, এভাবে কৃষিজমি কেটে বিনষ্ট করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ফসলি জমি রক্ষার্থে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। সম্মিলিতভাবে সকলে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে। অন্যথায় আগামী ১৫-২০ বছর পর কৃষিকাজ করার জন্য অনেক মাঠে জমি পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বিষয়। বিষয়টি খবর নিয়ে খুব দ্রুত নদীটি খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।