ব্যস্ত সময় যাচ্ছে হাতপাখার কারিগরদের

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

টানা দাবদাহে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। বৈশাখের এমন রুদ্র আবহাওয়ায় সব কিছু যেন থমকে গেছে। তবুও জীবিকার টানে গরমকে উপেক্ষা করে মানুষকে কাজ করতে হচ্ছে। বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুই গ্রাম আড়োলা-যোগীর ভবন। তীব্র গরমেও গ্রাম দুটির মানুষরা তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার কারিগররা জানান, গ্রাম দুটিতে কয়েকশ’ বছর ধরে চলমান আছে এমন রেওয়াজ। বাংলার চৈত্র, বৈশাখ মাস পাখা বিক্রির মূল সময়। মৌসুমে দুই গ্রাম মিলে অন্তত ৮ কোটি টাকার হাতপাখা বিক্রি করেন। আড়োলার উত্তর আতাল পাড়ায় গেলে দেখা মিলে এরশাদ আলী নামে এক যুবকের। বাড়ির সামনের গাছের ছায়ায় তিনি ও তার বাবা-মা কাজ করছিলেন। এরশাদ আলী নিজে কারিগর। একই সঙ্গে তালপাতার পাখার পাইকারি ব্যবসাও করেন। তিনি জানালেন, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পাইকাররা আসে। বিভিন্ন ওরশ, মেলায় এসব পাখা বিক্রি করেন এসব পাইকাররা। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কাহালুর পাইকড় ইউনিয়নে পাশাপাশি অবস্থিত আড়োলা ও যোগীরভবন গ্রাম দুটি। বছরের ৬ মাস ধরে হাতপাখা তৈরির মৌসুম চলে। শুরু হয় আশ্বিন মাস থেকে। ওই সময় থেকে তারা তালপাতা সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর শীত পেরিয়ে যাওয়ার পর যখন মাঠের কাজ শেষ হয়, তখন থেকে পাখা তৈরিতে লেগে পড়েন। এভাবে বর্ষার আগে পর্যন্ত চলে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ। এরশাদ আলী বলেন, প্রতি ঘরে এক মৌসুমে কমপক্ষে দুই লাখ পিস পকেট পাখা তৈরি করা হয়। আর ডাটা পাখা আরো এক-দেড় লাখ পিস করা হয়। টাকার মূল্যে একেকটা ঘরে প্রতি সিজনে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা আয় করে। এখানে খরচ অর্ধেক। বাকিটা লাভ। গ্রামের গোড়াপত্তনের ইতিহাস নিয়ে জানতে চাইলে প্রায় ৯০ বছর বয়সি আব্দুল গফুর বলেন, গল্প আর কি বলব। বাপ-দাদারা বানিয়েছে। আমরাও বানাচ্ছি। আগে একটা পাখা বিক্রি হয়েছে ২ আনা, ৪ আনা। এখন একেকটা পাখা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। চার হাজার টাকা পাইকারি দর। রফিকুল ইসলাম নামে আরেকজন ঘরের বারান্দায় বসে পাতা কাটছিলেন। তিনি বলেন, এই কাজ ছেলে মেয়ে পরিবারের সবাই করে।

ছেলেরা পাতা, বাঁশ কাটে, মেয়েরা রঙ করে থাকে। এসব কাজ আমাদের চৌদ্দপুরুষের। আমার বাপেরা করছে। তার বাপেরা করছে, তার বাপেরা করছে। করতে করতে আমাদের হাতে এসেছে। আগে হয়তো করছে অল্প কয়েকজন। এখন আমরা বড় পরিসরে করি। মৌসুম থাকায় হাতপাখা তৈরি করে বাড়তি আয় করতে স্বামীসহ বাবার বাড়িতে এসেছেন সাদিয়া নামে এক তরুণী। তার স্বামীর বাড়ি বগুড়া সদরের দাঁড়িয়াল এলাকায়। স্বামী নির্মাণ খাতে কাজ করেন।

এ সময় কাজের চাহিদা না থাকায় তিনিও হাতপাখা বানাচ্ছেন বলে জানান। সাদিয়া বলেন, বাবার বাড়িতে এসে হাতপাখা বানাচ্ছি। ঠিক করেছি আগামী বছর থেকে স্বামীর বাড়ি থেকে পাখা বানিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠাব। এখানে হাতপাখায় লাভ দেখে এই পরিকল্পনা করেছেন তারা।