তীব্র দাবদাহ ও প্রচণ্ড গরমে দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বাজারে ধস নেমেছে। শুরুতে বিক্রি হওয়া ১১০০ টাকা মণের টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ হিসাবে। একদিকে গরমে খেতে টমেটো রাখা যাচ্ছে না, অপরদিকে পাইকাররা টমেটো কিনে দেশের বাজারে সরবরাহ করতে পারছেন না। রাস্তা ও খেতে দুই জায়গাতেই টমেটো গরমে পচে নষ্ট হচ্ছে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এ বছর গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে ৯৬০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ছিল ৯৩৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়া কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবিতে টমেটো সংরক্ষণের জন্য জেলার বীরগঞ্জ ও চিরিরবন্দর উপজেলায় দুইটি মিনি হিমাগার স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। উত্তরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর সবচেয়ে বড় বাজার বসে দিনাজপুর সদর উপজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুরা বাজারে। রাত ৩টা থেকে শুরু করে এই বাজার চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত।
পুরো দেশে চাহিদা রয়েছে দিনাজপুরের গ্রীষ্মকালীন টমেটোর। স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদনের পর এবার বিক্রিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। প্রথম দিকে কৃষকরা টমেটো ১১০০ টাকা মণ পর্যন্ত আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু এখন সর্বোচ্চ দর ৪০০ টাকাও পাচ্ছেন না। আর এর কারণ তীব্র দাবদাহ। গরমের কারণে কৃষক খেতে টমেটো রাখতে পারছেন না। গরমে টমেটো আকারে ছোট থাকা অবস্থাতেই পেকে যাচ্ছে। এতে করে বাজারে টমেটোর আমদানি বেড়ে গেছে। আর তাই দামও কমে গেছে। কৃষি অফিস জানিয়েছেন, বিগত ২৪ বছর ধরে দিনাজপুর সদর উপজেলাসহ চিরিরবন্দর, খানসামা, বীরগঞ্জ, বিরল ও ফুলবাড়ি উপজেলায় এই গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ চলছে। টমেটোর বীজ বোনা শুরু হয়ে থাকে ডিসেম্বর মাসে। দুই মাসের মধ্যেই টমেটো গাছে ফল আসে আর ১ মাস পরই টমেটো পাকতে শুরু করে। তবে জুন মাস পর্যন্ত এই টমেটো জমিতে থাকে বলে কৃষি অফিস জানায়। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের গোপালপুর (গাবুড়া) বাজারে টমেটোর বিশাল হাট বসেছে। পুরোদমে চলছে এই টমেটোর হাট। প্রতিদিন এই হাট থেকে দেড়শ’ এর অধিক ট্রাক টমেটো নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। আগামী জুন মাস পর্যন্ত চলবে হাটটি। সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের সরকারপাড়া এলাকার শরিফুল ইসলাম, দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের বুড়িথান এলাকার রঞ্জিত রায়, কমল, রুহী দাস ও সুন্দরবন ইউনিয়নের মিয়াজীপাড়ার হাবিবুর রহমান, সদরপুর এলাকার লিয়াকত আলী বলেন, রাণী, বিপুল প্লাস ও প্রভেন সিড নামে তিন জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। সার ও বীজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কামলাদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার টমেটো উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। সেই মোতাবেক ফলন বৃদ্ধি পেলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের। তারা জানান, আবাদকৃত জাতের টমেটো হাটে কোয়ালিটি অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। অন্যবার এ সময় প্রতি মণ ৭০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যেত বলে জানান তারা। তারা বলেন, গরমের কারণে সময়ের আগেই টমেটো পেকে যাওয়া, আকার ছোট হওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়া এবং খেতে টমেটো রাখতে না পারার কারণেই টমেটোর বাজারে ধস নেমেছে। টমেটো হাটের আড়তদার ওয়াফেজ মোল্লা, তারা মিয়া, দেলোয়ার মাতবর ও শফি বলেন, প্রতিদিন এই টমেটো হাট থেকে দেড়শর অধিক গাড়ি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় টমেটো যাচ্ছে। এখন মণ প্রতি সর্বোচ্চ সাড়ে ৩০০ তেকে ৩৫০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। তবে কোয়ালিটি অনুযায়ী অনেক টমেটো ৪০০ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ শুরুতে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। এই টমেটো হাট আগামী জুন মাস পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন এই আড়তদাররা। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, দিনাজপুরের সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো অসময়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আসছে গত ২৪ বছর ধরে। প্রতিবারই এর আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা উন্নীত হচ্ছে। ফলন বেশি হলেও দাম কম পাওয়ায় প্রশ্নে তিনি জানান, সবেমাত্র মাঠ থেকে ফলন বিক্রি শুরু হয়েছে। গরমের কারণে ও বৃষ্টির ভয়ে কৃষক টমেটো খেত থেকে তুলে ফেলছে। সে কারণে একটু দাম কমেছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই টমেটোর দাম বেড়ে যাবে। তিনি জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ও বীরগঞ্জ উপজেলায় এই টমেটো সংরক্ষণের জন্য মিনি হিমাগার তৈরি হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জেলায় এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।