পথের কিনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সংকেত, সবুজে হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের খেত। ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে, ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে। মাঝে মাঝে এর পাকিয়াছে ধান, কোনখানে পাকে নাই, সবুজ শাড়ির অঞ্চলে যেন ছোপ লাগিয়াছে তাই। পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার এই লাইনগুলো বাংলার চিরচেনা রূপ। এখন গ্রাম-বাংলায় আগাম জাতের ধানের কারণে বৈশাখের শুরু থেকেই সোনারাঙা ধানে মুখরিত হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। বৈশাখের শুরু থেকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার অধিকাংশ এলাকাতেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। হাওরের বাতাসে এখন পাকা ধানের মনমাতানো গন্ধ। সকাল থেকে সন্ধ্যা কৃষকরা ব্যস্ত বোরো ধান কাটতে, মাড়াই করতে। মাড়াই শেষে নতুন ধান গোলায় তুলতে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বত্র ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। ফসলের মাঠে এখন সোনারাঙা পাকা ধানের সোনালি হাসি। বৈশাখের মাঝামাঝি এই সময়টাতে উজ্জ্বল রোদে মাঠের সোনারাঙা ধানগুলো ঝলমল করছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মন ভরে উঠেছে। ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলার মধ্যে ধান উৎপাদনের দিক থেকে গফরগাঁও শীর্ষ কয়েকটি উপজেলার একটি। গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের চিত্র পাওয়া গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এরইমধ্যে অনেক জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি জমির ধানগুলো পাকা অবস্থায় দোল খাচ্ছে। এ বছর ধানের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। ধানে পোকার আক্রমণ না হওয়া, জমিতে সুষম সার ব্যবহারে কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনে এই সুফল মিলেছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। একই কথা কৃষকেরও।
সম্প্রতি বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ভালো ফসল দেখা গেছে। যেদিকে চোখ যায়, বোরো ধানের পাকধরা বিস্মৃত সোনালি রঙের ঢেউ। অনেকে উৎসবের আনন্দে ধান কাটতে শুরু করেছেন। মাঠে ধান কাটতে আসা লংগাইর ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের কৃষক আনিছ উদ্দিন, সুজন মিয়া, এনামুল হক ও ফারুক মিয়া বলেন, এবার গত বারের চেয়ে ধানের ফলন বেশি হয়েছে। বাজারে এখন ৯৫০ থেকে ৯৬০ ধরে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। তবে যদি ধানের দাম এ থেকে আরও কমে যায় তয় লোকসান শুনতে হবে। যদি দাম বাড়ে, বেশ লাভ হবে কৃষক।’ তবে কৃষকেরা জানিয়েছেন, এলাকায় শ্রমিকসংকট রয়েছে। ফলে ধান পেকে গেলেও অনেক জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না।
চারিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই জানান, তিনি এবার প্রায় ২১ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার। ছয়ানী রসুলপুর গ্রামের কৃষক এনামুল ইসলাম, কদম রসুলপুর গ্রামের লুৎফর রহমান ও রসুলপুর গ্রামের মাহবুবুল আলম জানান, এবার ধানের খুবই ভালো ফলন হয়েছে। তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে ধান ঘরে তুলতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসার রকিব আল রানা বলেন, বোরো ধান আবাদে কৃষক সচেতন হলে কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর বোরো ধানের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় উপজেলার অসংখ্য বর্গাচাষি কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে। কষ্টার্জিত সোনালি ফসলে গোলা ভর্তি হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠবে।