ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দিনাজপুরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
দিনাজপুরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি

দিনাজপুরে ক্রমেই নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। জেলায় নেই বৃষ্টিপাত। এতে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। কোনো কোনো এলাকার মানুষ পানির অভাবে ঠিকমতো গোসল করতে পারছে না। পুকুর-ডোবাগুলো শুকিয়ে চৌচির। বড় দুয়েকটি নদী ছাড়া ছোট নদী শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎচালিত মোটর পাম্পে (সেচ পাম্প) পানি না ওঠায় বোরো খেতে পানি সেচ দেওয়ার জন্য কুয়ার মতো ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে নিচে নামানো হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। দিনাজপুরে লক্ষ্যণীয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দিনে প্রচণ্ড গরম ও ভোরের আকাশে কুয়াশা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এছাড়াও বৃষ্টিপাত না হওয়ার অন্যতম কারণ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি ১০ বছরে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর প্রায় ১০-১৫ ফুট নিচে নামছে। ৩০ বছর আগে যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৩০ ফুটে, এখন সেখানে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৯০ ফুট অথবা তার চেয়েও বেশি গভীরে। জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের ক্ষরা মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর ছিল গড়ে ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি, ১৯৯৫ সালে পানির স্তর নেমে দাঁড়ায় ৩০ ফুটে। ২০১০ সালে পানির স্তর নেমেছে ৬৬ ফুটে। ২০১৯ সালে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ ফুটে। ২০২৪ সালে এসে সেটা প্রায় দেড়শ’ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় কৃষক ধান উৎপাদনে চরম সংকটে পড়েছেন। দিনাজপুরের সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর, খানসামা ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েলগুলোতেও পানি উঠছে না। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ অবস্থা আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। বর্তমানে দিনাজপুরে ৫০টি ইউনিয়নের মানুষ সুপেয় পানির অভাবে রয়েছে। এসব ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে পানির জন্য তীব্র হাহাকার। অনেক এলাকায় চাষাবাদ তো দূরের কথা, মানুষের খাবার পানি পাওয়াও দুষ্কর হয়ে গেছে। এ ব্যাপরে বিভিন্ন ইউনিয়নের জন সাধারণ জানান, গোসল করার মতো পানি নেই। কেউ শ্যালো মেশিন চালালে সেখান থেকে গোসল ও ওজুর পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাহানপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, প্রায় ২ মাস থেকে আমাদের এলাকায় টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। যাদের বাসায় সাবমার্সিবল আছে তাদের বাড়ি থেকে অথবা ধান-ভুট্টাখেতের শ্যালো ও মোটর যখন চালুর করে তখন সেখান থেকে পানি নিয়ে এসে সংসারের প্রয়োজনীয় কাজ সারছি। পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের দাবি, নদী, বিল, ঝিল, খাল, ডোবা, নয়নজলিগুলোতে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা এবং অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করা গেলেই কেবল এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে দিনাজপুরের মানুষকে। দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এএন মো. নাইমুল এহসান বলেন, আপাতত জনগণকে টিউবওয়েল বসানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সাবমার্সিবল, শ্যালো ও তারা পাম্প বসানো হচ্ছে। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ১০২টি ইউনিয়ন রয়েছে। চলতি বছরে ১০টি সাবমার্সিবলসহ ২৩শ’ শ্যালো ও তারা পাম্প বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, গড়ে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর যেসব এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন সেসব এলাকায় টিউবওয়েল দিয়ে ঠিকমতো পানি উত্তোলন হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত