ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নকলায় সোনালি ধানের শীষ দেখে কৃষকের হাসি

নকলায় সোনালি ধানের শীষ দেখে কৃষকের হাসি

শেরপুরের নকলায় যতদূর চোখ যায় দেখা মিলে স্বপ্নের সোনালি ও সবুজ ধানের মাঠ। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সোনালি ধানের শীষগুলো যেন কৃষান-কৃষানিদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার প্রতীক হয়ে বাতাসে দুলছে। মাঠে স্বপ্নের সোনালি ধানের শীষ দেখে কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। সোনার ধান গোলায় তোলার জন্য কৃষকরা প্রস্তুত। এরইমধ্যে কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলে অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষক-কৃষানিরা। তবে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকনোর জন্য বরাবরের মতো শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে এবার কৃষকরা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হবেন বলে কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছর উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরের চেয়ে এবার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি করা হয়েছে। এবছর নকলায় ১২ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে; যা লক্ষ্যমাত্রার সমান। এরমধ্যে হাইব্রীড জাত ৯ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, এতে উৎপাদিত ধান থেকে চাল পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৫৫ মেট্রিকটন এবং উফশী জাত ২ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, এতে উৎপাদিত ধান থেকে চাল পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ১১৪ মেট্রিকটন। ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ মো. ছায়েদুল হক জানান, এবার আবহাওয়া বোরো আবাদের অনুকূলে থাকায় কৃষকরা অধিক লাভের আশা করছেন। তিনি আরো জানান, এবার কিছু এলাকায় মাজরা পোকার আক্রমণ ছাড়া কৃষকদের তেমন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ধানের দরপতনের কারণে এবারো কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হলে আগামীতে ধানের পরিবর্তে ভুট্টাসহ অন্যান্য আবাদ করবেন বলে অনেক কৃষক-কৃষানি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮ হাজার কৃষককে বোরো প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে, ৪ হাজার ২০০ জনকে হাইব্রীড জাতের প্রণোদনা ও ৩ হাজার ৮০০ জনকে উফশী জাতের প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবছর উপজেলায় ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৫৮, ব্রি ধান ২৮, সুপার হাইব্রিড, ব্যাবিলন, তেজগোল্ডের মতো উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান বেশি আবাদ করা হয়েছে। ধান চাষের উপযোগী সব জমিকে আবাদের আওতায় আনতে ও জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী আরো জানান, অনেক সময় শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাটার উপযোগী হওয়ার পরেও কৃষকরা যথাসময়ে ধান ঘরে তুলতে পারেন না। ফলে কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করলে কৃষকরা এ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এমন একটি আধুনিক কৃষিযন্ত্র হলো কম্বাইন হার্ভেস্টার। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারের ফলে ধানকাটা ও মাড়াইয়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খরচ কমেছে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ধান ও গম কাটা ও মাড়াইয়ের অত্যাধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টার কৃষকদের দোড়গোড়ায় চলে এসেছে। এ যন্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতিটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারে সরকার ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এ যন্ত্র দিয়ে ঘণ্টায় ১১ থেকে ১৩ লিটার পরিমাণ জ্বালানিতে এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা সম্ভব। হার্ভেস্টার ব্যবহার করলে প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা কৃষকের বাঁচতে পারে বলে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত