তীব্র গরমে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সারা দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকাল কয়েক জায়গায় স্বস্তির বৃষ্টির দেখা মিললেও অধিকাংশ জেলায় গরমের তীব্রতা রয়েই গেছে। এদিকে মেহেরপুরে তীব্র দাবদাহে মানুষের পাশাপাশি কৃষকের গবাদিপশুসহ খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে এসব পশুদের। গবাদিপশুর খামারি ও বিভিন্ন পশুহাট ইজারাদারদের দেওয়া তথ্য মতে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর মেহেরপুরে প্রায় ১১০০ কোটি টাকার গবাদিপশু বেচাকেনা হয়। নিজ জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশে কোরবানির পশু জোগান দেওয়া অন্যতম জেলা মেহেরপুর। তবে মেহেরপুরে কর্মরত প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানেন না কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গবাদিপশুগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য কত। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলাতে মোট পশু খামারের সংখ্যা ২৯ হাজার ৬০৮টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮ হাজার ১৭২টি, গাংনী উপজেলায় ১৪ হাজার ৫৩০টি এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৬ হাজার ৯০৬টি। খামারগুলোর মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৯০ হাজার ৭৫৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ৫৯ হাজার ২২০টি গরু, ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি ছাগল, ২ হাজার ৯১৪টি ভেড়া এবং ৫৪৪টি মহিষ রয়েছে। একাধিক পোলট্রি খামারি ও পল্লী পশু চিকিৎসকের দেওয়া তথ্য মতে, তাপপ্রবাহের ফলে শুধু সদর উপজেলাতেই অন্তত ৫ হাজার পোলট্রি মুরগিসহ কয়েকটি ছাগল মারা গেছে। অথচ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাব মতে মাত্র ১৫০টি পোলট্রি মুরগি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে আর এর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ১৮। এ ছাড়াও দুটি গরু ও ৬টি ছাগল হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানটি চোখ কপালে ওঠার মতো হলেও কর্মকর্তারা বলছেন, খামারিরা এখন অনেক সচেতন, এজন্যই মৃত্যুর হার কম। গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ওই উপজেলাটিতেই ২৫ হাজার ৬৪০ গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১১ হাজার ৮৪৪টি গরুর খামার, ১৩ হাজার ৪৯২টি ছাগলের খামার ও ৩০৪টি ভেড়ার খামার। পশু খামারগুলোর মাধ্যমে কোরবানি উপলক্ষ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০২টি কোরবানি যোগ্য পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ৪০ হাজার ৭৮০টি গরু, ৯৪ হাজার ১৫১টি ছাগল, ১৯৩৬টি ভেড়া ৪৩৫টি মহিষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রাণী সংখ্যা সমান হলেও পশু খামারের সংখ্যায় রয়েছে ভিন্নতা। অপরদিকে, মুজিবনগর উপজেলায় ভেড়ার যে সংখ্যা দেখানো হয়েছে সেটি কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ভেতরে মেহেরপুরের মুজিবনগরেই সবচেয়ে বেশি ভেড়া পালন করা হয়। তীব্র দাবদাহে গরু নিয়ে বিপাকে খামারি তুষার শেখ বলেন, অত্যধিক গরমে দুধের উৎপাদন কমে গেছে। কোরবানি সামনে রেখে যে গরুগুলো প্রস্তুত করছি সেগুলো নিয়েও রয়েছি চরম শঙ্কায়। লালন পালনের খরচ বেড়েছে। পশুর ঘর ঠান্ডা রাখতে ঘরের চালাই ও পশুর গায়ে পানি ছিটিয়েও লাভ হচ্ছে না। নানা রোগে চিকিৎসক ও ওষুধের খরচ বাবদ গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মেহেরপুর সদর উপজেলার একজন বড় গরুর খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পশুকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত পানি, স্যালাইন ও বিশেয খাবার। দিনে গোসল করাতে হচ্ছে কয়েকবার। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শ্রমিক খরচ বেশি লাগছে। তাই বাড়ছে লালন-পালনের খরচ। এমন অবস্থায় আসন্ন কোরবানিতে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তিনিসহ অন্যান্য খামারিরা। গরু প্রতি দিনে তার প্রায় ৫০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, গাভীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে একটি গাভী থেকে ২০ থেকে ২৫ লিটার দুধ পাওয়া যেত, এখন তা ১৫ থেকে ১৮ লিটারে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সদর উপজেলার লেয়ার মুরগি পালনকারী রাজু বলেন, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক এড়াতে মুরগিকে কম খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। এতে ছোট হয়ে যাচ্ছে ডিম। উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রহমত উল্লাহ বলেন, তাপপ্রবাহে গবাদি পশুর সুস্থতা রক্ষার্থে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের নানা পরামর্শ দেওয়া ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় দানাদারের চেয়ে ঘাস জাতীয় খাবার খাওয়ানোসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খামারিদের সহায়তায় মোবাইল ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে। এ ছাড়াও কৃষক ও খামারিদের মাঝে সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে। চলমান তাপপ্রবাহে মেহেরপুরের খামারিদের ক্ষতি ও করণীয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে মেহেরপুর সদর উপজেলা, গাংনী উপজেলা ও মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে অফিস প্রধানদের পাওয়া যায়নি। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হারিসুল আবিদ মোবাইল ফোনে বলেন, আমার ছেলে অসুস্থ হওয়াতে তাকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। আপনি আজকে আর ফোন দিয়েন না। উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম ৬ গবাদিপশু থাকলে সেটিকে খামার বলে গণ্য করা হয়। এ সকল পশু খামার ছাড়াও মেহেরপুরের প্রতি বাড়িতেই গবাদিপশু পালন করা হয়।