ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চড়া দাম পেয়ে খুশি বাঁশখালীর চাষিরা!

কালীপুরের সুস্বাদু লিচু যাচ্ছে দেশ-বিদেশে

কালীপুরের সুস্বাদু লিচু যাচ্ছে দেশ-বিদেশে

চট্টগ্রামে লিচুর কথা উঠলেই প্রথমে সুস্বাদু ও পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ লিচু উৎপাদন এলাকা হিসেবে বাঁশখালীর কালীপুরের নামটি সর্বাগ্রে উঠে আসে। এখানকার লিচু যেমন সুস্বাদু, তেমন পুষ্টি সমৃদ্ধ। তাই কালীপুরের লিচুর কদর সারা দেশেই।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত যুগ যুগ ধরে। বৈলছড়ি, গুণাগরি, পুকুরিয়া, জলদি, জঙ্গল চাম্বল সহ প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়নেই পাহাড়ি এলাকায় একই সাথে সমতলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে বহুকাল থেকেই। মৌসুমের একেবারে প্রথম দিকেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কালীপুরের লিচু। বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশ জুড়েই। আগাম লিচু বাজারে দেখা মিলছে এখন। তেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হওয়ায় এবার লিচুর উৎপাদন হয়েছে বরাবরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। লিচুর বাম্পার ফলন হলেও দামের কমতি নেই এখানে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবার আগাম লিচুবাগান ও লিচুর আকার ভেদে প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। স্থানীয় বাজারে প্রথম দিকে দাম বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজশাহী-দিনাজপুরের লিচুর তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও স্বাদে-মানে বাঁশখালীর লিচুর তুলনা নেই। এছাড়া বাঁশখালীর লিচুর তুলনায় রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুরের লিচু কিছ ুদিন পর বাজারে আসতে শুরু করে। চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বাঁশখালীর লিচুর আলাদা কদর রয়েছে।

এরই মধ্যে বাঁশখালী অধিকাংশ হাট বাজারে লিচু ক্রয় করার জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিন বাঁশখালী কালীপুরের রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে কিংবা গুনাগরিতে প্রধান সড়কের আশপাশে সাধারণ যাত্রীরা গাড়ি থামিয়ে লিচু কিনতে দেখা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ দেশ বিদেশে লিচু রপ্তানি করার জন্য গাড়ি গাড়ি পাইকারি দামে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। মৌসুমের একেবারে প্রথম দিকেই বাজারে পাওয়া যায় বলে কালীপুরের লিচুর খ্যাতির রেয়াজটাও কমেনা। এবার লিচু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান কালীপুর ইউনিয়নের পূর্ব পালেকগ্রাম এলাকার লিচু চাষি মোঃ রিয়াদুল ইসলাম ও নুরুল হক। বাঁশখালী উপজেলার কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালীতে ৬৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক চাষ হয়। এবারে ফলন বেশি হওয়ায় লিচু চাষিরা খুশি বলে জানান তিনি। তাছাড়া কৃষি অফিস থেকে যথাযত সহযোগিতা দেয়া হয়েছে লিচু চাষি দের এমনটিও জানান ওই কর্মকর্তা। ব্রিটিশ আমল থেকেই বাঁশখালীর উপজেলার কালীপুরে জমিদার বংশের লোকজন বোম্বাই, চায়না টু, চায়না-থ্রি, মোজাফফরী ও স্থানীয় জাতের লিচু চারা কলম সংগ্রহ করে বাগান করে আসছেন। পরে তা জলদি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, চাম্বল, নাপোড়ায় বিস্তৃতি লাভ করে। ভালো ফলন হওয়ায় একেকটি বাগান এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁশখালীর তিন-চারটি এলাকায় লিচুর পাইকারি বাজার বসে। পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায় বাঁশখালীর এ লিচু। বাঁশখালীর লিচুর কলম চারার চাহিদাও ব্যাপক। কালীপুর, বৈলছড়িসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কলম চারার ব্যবসা ভালো জমেছে। দূর দূরান্ত থেকে লিচু চাষিরা কলম চারা কিনে নিয়ে যায় এখান থেকে। কালীপুরের একটি বাগান থেকে লিচু কিনতে আসা সাতকানিয়া এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, ‘সারা বছর তো আমরা রাসায়নিক যুক্ত লিচু খেয়ে থাকি। কিন্তু বাঁশখালীর লিচুতে ভেজাল থাকে না, তাই দাম একটু বেশি হলেও বাগান থেকেই বাচ্ছাদের জন্য লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবু ছালেক বলেন, বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে ৬৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে লিচু চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় উন্নত প্রজাতির এই লিচু উৎপাদনে চাষিরা বেশ গুরুত্ব সহকারে উৎপাদন কাজে শ্রম ব্যয় করায় বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশ জুড়েই। বর্তমানে বাঁশখালীর সর্বত্র আগাম লিচু বাজারে আসায় চাষিরা চড়া দামে বিক্রি করছে তা।

লিচুর উৎপাদনের শুরুতেই বৃষ্টি কম হওয়ায় চাষিরা অনেকটা হতাশ ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বৃষ্টির দেখা মেলায় চাষিরা অনেকটা আশান্বিত হলেও প্রবল বাতাসে ও ভারি বৃষ্টি ও বজ্রপাতে লিচু গাছের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কা রয়েছে চাষিরা। বাজারে আগাম লিচু বাগান ও লিচুর আকার ভেদে প্রতি শত লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। স্থানীয় বাজারে প্রথম দিকে দাম বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় কমে আসবে। চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র বাঁশখালীর কালীপুরের লিচুর আলাদা কদর রয়েছে। এ বছসর লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত