ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ প্রীতিলতার ১১৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ প্রীতিলতার ১১৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ রোববার ৫ মে পটিয়ায় ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯১১ সালে ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। প্রীতিলতার বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদারা। মাতার নাম প্রতিভা দেবী। বাবা চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের প্রধান কেরানি চাকরি করলেও মা ছিলেন গৃহিণী। বীরকন্যা প্রীতিলতার ডাকনাম রানী এবং ছদ্মনাম ফুলতার। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তখনকার ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ’ এরূপ অবমাননামূলক কথার জন্য ইউরোপিয়ান ক্লাব নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল ভারতীয়রা। ওই সময় প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ইউরিপিয়ান ক্লাব আক্রমণ সফল করেন। পুরুষবেশী প্রীতিলতা সামরিক কায়দায় তার বাহিনীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এই সময়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হলে তাৎক্ষণিকভাবে পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন। তার আত্মদান বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামে আরো উজ্জীবিত করে তোলে। বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পংকজ চক্রবর্ত্তী জানান, এই দিবস উপলক্ষ্যে তার নিজ গ্রামে ধলঘাটে প্রীতিলতা ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ রোববার সকাল ১০টায় উপজেলার ধলঘাটে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট সাংস্কৃতিক ভবনে তার আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মাস্টারদা সূর্য সেনের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত সশস্ত্র সংগ্রামে প্রীতিলতাকে প্রথম আত্মোৎসর্গকারী নারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রীতিলতা চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ১৯২৯ সালে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর দুই বছর পর প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডিস্টিংশনসহ গ্রাজুয়েশন করেন। ইডেন কলেজের ছাত্রী থাকাকালে প্রীতিলতা লীলা নাগের নেতৃত্বাধীন দীপালি সংঘের অন্তর্ভুক্ত শ্রীসংঘের সদস্য এবং কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী থাকাকালে কল্যাণী দাসের নেতৃত্বাধীন ছাত্রীসংঘের সদস্য হন।

গ্রাজুয়েশন করার পর তিনি চট্টগ্রামের নন্দনকানন অপর্ণাচরণ নামক একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালে অনেকগুলো ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী দল তৈরি হয়। ওইসব দলের সদস্যরা বিশ্বাস করতেন যে, কেবল সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ভারতের স্বাধীনতা অর্জিত হতে পারে। প্রীতিলতা মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী দলের প্রথম নারী সদস্য ছিলেন। তিনি টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইন দখল অভিযানে যুক্ত ছিলেন। তিনি জালালাবাদ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতাস্থ আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজবন্দি রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে যথাসময়ে তা পালন করেন। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন ধলঘাট সংঘর্ষে কয়েকজন বিপ্লবী প্রাণ হারান। মাস্টারদা ও প্রীতিলতা পালাতে সক্ষম হন। পুলিশের জরুরি গ্রেপ্তার তালিকায় প্রীতিলতার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। মাস্টারদা তাকে স্কুল ছেড়ে দিয়ে পুরুষ বিপ্লবীদের মতো আত্মগোপন করার নির্দেশ দেন। প্রীতিলতা অপর একজন বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্তসহ গোপন আস্তানায় চলে যান। প্রীতিলতা ১৯১১ সালে ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পর বীরত্বের সাথে আত্মাহুতি দেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত