শরীয়তপুরের নড়িয়া পদ্মাপাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পদ্মা নদী শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি পূর্বদিক থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে, যা চাঁদপুরে গিয়ে মেঘনায় মিশেছে। এখন প্রতিদিন শেষ বিকালে সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে হাজারো মানুষ নড়িয়ার পদ্মাপাড়ে জড়ো হন। অনেকে বলেন, এটা মিনি কক্সবাজার। পশ্চিমের আকাশে সূর্য যখন হেলে পড়ে, তখন লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে পদ্মার বুকজুড়ে। এরপর ধীরে ধীরে দিগন্তে মিশে যায় লাল সূর্যটি। অপলক সৌন্দর্যমণ্ডিত এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন পদ্মারপাড়ে ছুটে আসছে হাজারো মানুষ। শত বছরের পদ্মার ভাঙ্গন রোধ করে ২০১৯ সাল থেকে শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের জন্য পাল্টে গেছে এখানকার চিত্র। বিভিন্ন উৎসবসহ নানা অবসরে শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ে জয় বাংলা এভিনিউতে উপচেপড়া ভিড় পরে ভ্রমণ পিপাসুদের। এ যেন মিনি কক্সবাজার। অবসরে কিছুটা বিনোদন পেতে পরিবার পরিজনসহ পদ্মারপাড়ে এসে পানি স্পর্শ করে আনন্দ উপভোগ করে অনেকেই। পাশাপাশি মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কারণে এখানে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নড়িয়ার পদ্মার তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার কিছু এলাকায় প্রবল নদীভাঙন ছিল। ওই সময়ে ভাঙনে অন্তত ২০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়; ৩টি বাজারের অন্তত ৫ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পদ্মায় বিলীন হয়। সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। নড়িয়ার ভাঙন ঠেকাতে ২০১৯ সাল থেকে ‘নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা ও ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর চর খনন করা হয়। দর্শনার্থীরা জানান, এখানকার নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের ভীর বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ প্রায় প্রতিদিনই শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার অনেক মানুষ এই মিনি কক্সবাজারের সূর্যাস্ত উপভোগ করতে আসছে। ঢাকা থেকে নানাবাড়ি নড়িয়াতে বেড়াতে এসে নাসিমা বলেন, ছোটবেলা শুনেছি নানাদের বাড়িঘর ভেঙে পদ্মায় নিয়ে যেত। এখন এসে সেই পদ্মার পাড় এ রকম দৃশ্য দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগে। আমি নানু বাড়িতে যখনই আসি। তখন এখানে ঘুরতে আসি। শরীয়তপুর শহর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা পলাশ মিয়া বলেন, আমাদের শরীয়তপুরে তেমন কোনো ঘোড়ার মত পর্যটক কেন্দ্র নেই। তবে পদ্মার পাড়ে জয় বাংলা এভিনিউর এই মনোরম দৃশ্য যেন মিনি কক্সবাজার। এখানে অনেক লোক আসে তাই সময় পেলে এখানে আসি ঘুরে যাই। মাদারীপুর থেকে আসা রাব্বি হাসান বলেন, শরীয়তপুরের কিছু বন্ধু আছে যারা আমাদের সঙ্গে মাদারীপুরে নাজিমুদ্দিন কলেজে পড়ে। ওরা প্রতিনিয়তই আমাদেরকে নড়িয়ার এই সৌন্দর্য দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তাই আজ এসেছি। যেমনটা বলেছে তেমনটাই সুন্দর। এ বিষয়ে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, ভাঙ্গন বন্ধ হওয়ায় এবং পদ্মাপাড় আকর্ষণীয় পর্যটক কেন্দ্রের রূপ নেওয়ায় এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে সফল এ প্রকল্প।