চিংড়ির পোনায় উপকূলের মানুষের জীবিকা
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরা উপকূলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। নদীতে ভেসে আসা ‘হোয়াইট গোল্ড’ খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ উপকূলের মানুষ। তবে রেণু পোনা আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ আইনত নিষিদ্ধ জেনেও তারা ধরেন। কেন না, এই পোনা বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালাতে হয় তাদের। সম্প্রতি উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীতে অনেক নারী-পুরুষকে পিঠে দড়ি বেঁধে জাল টানছেন। নদী থেকে উজানে ভেসে আসা বাগদা ও গলদার রেণু পোনা ধরার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অসংখ্য নারী-পুরুষ নেট দিয়ে তৈরি করা একধরনের জাল পেতে অপেক্ষা করছেন। কেউ নদী তীরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত জাল টেনেই চলেছেন। কেউ আবার নৌকায় বসে মাঝনদীতে জাল পেতেছেন। জালে আটকে পড়া ক্ষুদ্রাকৃতির গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে নদীর চরে রাখা গামলাতে উঠিয়ে রাখছেন। সুন্দরবনের গা ঘেঁষা শ্যামনগর উপজেলার দীপ ইউনিয়ন গাবুরার সোরা গ্রামের বাসিন্দা হামিদ গাজী সেখানে জাল নিয়ে খোলপোটুয়া নদীতে নেমেছিলেন। আলাপকালে তিনি বলেন, এলাকায় অন্য কোনো কাজ না থাকায় রেণু পোনা ধরা আইনত নিষিদ্ধ জেনেও জীবিকার তাগিদে এ কাজ করি আমি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ ধরে যা আয় হয়, তাতেই চাল কিনে কোনোরকমে চলে আমার সংসার। নদী থেকে ধরা চিংড়ির রেণুগুলো খুব ভালো মানের হয়। বড় ঘের ব্যবসায়ীরা সব কিনে নিয়ে যান। খোলপোটুয়া নদীর তীরের ডুমুরিয়া গ্রামের মমতাজ বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু ধরি আমি। এসব ধরে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। শুধু তিনি নন, খোলপোটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের তীরে এমন হাজারো মানুষ চিংড়ির রেণু ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তিনি আরো বলেন, এগুলো বিক্রি করতে বাইরে কোথাও যেতে হয় না। ফুড়িয়ারা (বেপারি) এখান থেকেই কিনে নিয়ে যায়। শ্যামনগর পরিবেশ উন্নয়ন ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হলিম বলেন, উপকূলে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় মাছ শিকারই তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। তাই অবৈধ জেনেও উপকূলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবিকার তাগিদে রেণু পোনা ধরা ধরেন। পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সাতক্ষীরা ইউনিটের সমন্বয়ক এস এম শাহিন আলম বলেন, বর্তমানে উপকূলীয় আশাশুনির শ্রীউলা, প্রতাপনগর, আনুলিয়া ও শ্যামনগরের কাশিমাড়ি, কৈখালী, রমজাননগর, মুন্সীগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনি, আটুলিয়া, পদ্মপুকুর ও গাবুরার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিংড়ির রেণু আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবার রেণু ধরা ও ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে সুন্দরবনের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে। অভাব-অনটনের এ জনপদের মানুষের সচ্ছলতা ফিরে আসার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এসব চিংড়ির রেণু।
শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদা বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন ২৩ হাজার ৫৩৫ জন জেলেকে মৎস্যজীবী কার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার নদনদীতে এভাবে অপরিকল্পিতভাবে মাছের পোনা আহরণের ফলে মৎস্য সম্পদ এখন অনেকটা হুমকির মুখে।