ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুঃশ্চিন্তায় দুই পাড়ের মানুষ

কেশবপুরে পলি ভরাটে হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী

কেশবপুরে পলি ভরাটে হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী

যশোরের কেশবপুরে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরশনের ব্যবস্থা না হলে হরি-ঘ্যাঁরাইল নদীর দুই পাড়ের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না আগামী দিনগুলোতে। দূঃশ্চিন্তায় হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদীর দুই পাড়ের মানুষ।

যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৯টি উপজেলার পানি নিষ্কাশনের প্রধান নদী যশোরের ভবদহ থেকে হরি নদী ১৮ কিলোমিটার। তেলীগাতি ও ঘ্যাঁংরাইল ২৫ কিলোমিটার, হাবরখালী ৯ কিলোমিটার, এর উপনদী ও শাখা নদী টেকা মুক্তেশ্বরী, যশোর থেকে ভবদহ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। ঝিকরগাছা থেকে হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা কাশিমপুর পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার। ডুমুরিয়ার হামকুড়া ১৫ কিলোমিটার, মধ্যভদ্রা ও জয়খালী নদী ২১ কিলোমিটার, পশ্চিম শালতা গোয়াচাপা ২৩ কিলোমিটার। বর্তমানে আপার শালতা লোয়ার শালতা ও ভদ্রা নদী ২৯ কিলোমিটার। আমতলা ১৬ কিলোমিটার। প্রধান নিষ্কাশন এর পথে একটি শাখা নদী দেলুটি ৮ কিলোমিটার। হাবরখালী ও দেলুটি নদী দিয়ে শিবশা নদীতে পানি পতিত হয়।

৩১৫ কিলোমিটার নদীতে ৯১টি স্লুইস গেট রয়েছে। কোনো কোনো রেগুলেটরের সাথে একাধিক বিল যুক্ত আছে। যেমন বর্তমান কেওড়াতলা বিলের সাথে কেওড়া তলা, মধুগ্রাম ও বর্ণি বিল, খুকশিয়া ৮ ভেন্টের সাথে ছোট বড় ২৭টি বিল যুক্ত যেমন পশ্চিম বিল খুকশিয়া, হরিণা, নড়ই, জিয়েলদা ফটকে ২৮ কিলোমিটার দূরত্ব, নরনিয়া ৪ ভেন্টের সাথে ১০/১২টি বিল যুক্ত, যার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।

ভবদহ ২১ ও ৯ ভেন্টের সাথে ছোট বড় ৫২টি বিল যুক্ত। যেমন যশোরের হরিণার বিল, কুমার সিং, সুন্দলী, ঝিকরা, বোকড়, ক্যাদারিয়াসহ মোট ৫২টি বিল রয়েছে, যার ড্রেনেজ খাল মুক্তেশ্বরীসহ প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এছাড়া জিয়েলতলা, পাতিবুনিয়া, আসাননগর, চরবান্দা, তেলিখালী কানাইডাঙ্গা, বকুলতলা, নলতা, শিবনগর মধুখালী, পায়রা, কপালিয়া, সিংঙ্গে, কুলবাড়িয়া, কেশবপুরের বলধালী, গরালিয়া, বুড়লি, পাথরা, টিপনে, চটচটিয়া, রতনখালী, সুন্দর মহল, ফুলবাড়ী, বাগআঁচড়াসহ মোট ৯১টি স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হয়। এই অববাহিকায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকা।

পলি ভরাটে বর্তমানে হরি নদীতে কোনো জোয়ার উঠে না এবং কোনো গেটের পানি নদীতে পতিত হয় না। তেলিগাতি নদীতে হাঁটু পানি থাকে। ঘ্যাঁংরাইল নদীতে জোয়ার ছাড়া গোল পাতার নৌকা চলতে পারে না। নদীতে প্রচুর চর পড়েছে। নদীটি ৫০০ মিটারের বেশি চওড়া থাকলেও ৫০ থেকে ৬০ মিটারের বেশি জোয়ার উঠে না। নদীর মোহনায় জোয়ার ছাড়া খেয়া পার হওয়া যায় না। মুক্তেশ্বরী নদীর মোহনায় ভবদহের পাম্প মেশিন থাকলেও পলি ভরাটের কারণে পানি সরবাহ করতে পারে না। হরিহর নদীর নিম্ন এলাকায় পলি ভরাটের কারণে গেটগুলো পানি নিষ্কাশন করতে পারে না।

বুড়িভদ্রা নদীর নিম্ন এলাকা পলি ভরাটে উপরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ২০১৮ সালে নদী খনন করলেও পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। আপারভদ্রা নদী পূর্ণ পলি ভরাটের কারণে কোনো গেট দিয়ে নদীতে পানি পতিত হয় না। হামকুড়া নদী ২০ বছর পূর্ব থেকে পলি ভরাটে অকার্যকর রয়েছে। ফলে বিলের পানি ভিন্ন পথে প্রবাহিত করা হয়েছে। মধ্যভদ্রা ও জয়খালি নদী ২০ বছর পূর্বে মৃত হলেও ২০১৯ সালে খনন করা হলেও পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পশ্চিম শালতা খনন করা হলেও শাখা নদী হাড়িয়া নদীর উপরের অংশ পলিতে ভরাট হয়ে পড়েছে। শাখা নদী গোনাখালী শীর্ণ (ছোট) আকারে চলছে। গোয়াচাপা নদী পূর্ণ ভরাট থাকায় ঘ্যাঁংরাইল নদীতে পানি আসতে পারে না। আমতলী, তালতলী ও কুলবাড়ি নদী এ বছর খনন করা হয়েছে। আপার শালতা নদী ৭ কিলোমিটার খনন করা হলেও পূর্ণ পানি এখন লোয়ার শালতা নদী দিয়ে ঘ্যাঁংরাইলের পতিত মুখ বারোআড়িয়া মিলিত হয়ে হাবরখালী হয়ে শিবশায় পতিত হচ্ছে।

৫ বছর পূর্বেও এই নদীর পানি লোয়ার শোলমারি দিয়ে কাজিপাশা নদীতে যেত। এখন লোয়ার শোলমারি শতভাগ মৃত হওয়ায় শালতা ভদ্রা হাবর খালি নদীর পূর্ণাঙ্গ উপনদীতে রূপান্তরিত হয়েছে। যশোর জেলার অভয়নগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ, যশোর সদর থানার দক্ষিণ-পূর্ববাংশ, কেশবপুর ও মনিরামপুর, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটার পশ্চিমাংশ, পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়ন এবং সাতক্ষীরা জেলার তালার উত্তর অংশ। হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ২৫ লাখ।

হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরশন কমিটির সভাপতি ও সাবেক পাউবো‘র সদস্য মহির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৬০ সালের পূর্বে এই অববাহিকায় গোন-বেগনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি ঘন মিটার পানি সঞ্চালিত হতো। পোল্ডার ব্যবস্থার পরে তা কমে দাঁড়ায় ২ থেকে আড়াই কোটি ঘন মিটারে। পলির পরিমাণ ঠিক থাকা পানির সঞ্চালন কমে যাওয়ায় জোয়ারের প্রান্ত ভাগ থেকে পলি জমতে থাকে। এ অঞ্চলে ১৯৮৪ সালের পর থেকে ডজন খানেক নানাবিধ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করলেও টিআরএম প্রকল্প ছাড়া আর কোনো প্রকল্প নদীর নাব্যতা সৃষ্টি ও ধরে রাখতে পারেনি। নদীর বুক পলি ভরাটে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থতি বিবেচনায় হরি নদীতে টিআরএম ছাড়া সকল বিকল্প অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। হরি নদীতে জরুরিভিত্তিতে টিআরএম বাস্তবায়নে প্রয়োজন বলে মনে করি।

এ ব্যাপারে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, টেকা থেকে হরি নদী খননের জন্য অর্থ বরাদ্দের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে হরি, শ্রী হরিনদী খর্ণিয়া ব্রিজ থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর দিকে খনন করা হবে। এ মুহূর্তে হরি- ঘ্যাঁংরাইল নদী খননের কোনো পরিকল্পনা নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত