কাউখালীতে ভুট্টা চাষে ভুট্টো ইউসুফ
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এনামুল হক, কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আমরাজুড়ি ইউনিয়নের কৃষক ইউসুফ আলী ভুট্টো ভুট্টা চাষ করে এলাকায় জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ভুট্টা চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে- এমন দৃশ্যগুলো টেলিভিশনের পর্দায় দেখে দেখে তার নিজের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহ জাগ্রত হয়। এরপর তিনি নিজে উদ্যোগে ভুট্টো চাষ শুরু করেন। ভুট্টা চাষের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত জমি। ইউসুফ আলীর নিজের এত পরিমাণ জমা জমি নেই, যার ফলে অনেক চিন্তাভাবনা করে তিনি তার ইচ্ছা পূরণের জন্য একটি পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ৩৩ শতাংশের এক বিঘা জমি তিনি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নগদ মূল্যে ১ বছরের জন্য গ্রহণ করেন। এলাকার এককালীন ফসলের জমিগুলো জমির মালিকদের নিকট থেকে নগদ টাকা চুক্তি নিয়ে প্রথমবারের মত বড় আকারে ৪৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও ১৫ বিঘা জমিতে অন্যান্য রবি শস্য চাষাবাদ শুরু করেন।
এই বছর তেমন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হওয়া ভুট্টোর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম বছরই ইউসুফ আলী ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে এমন ৪৫ বিঘা জমিতে ভুট্টো চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৮৫০ টাকা দরে ২ কেজি করে উন্নত জাতের ৩৩ ৫৫ ভুট্টো বীজ কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয় করে রোপণ করেন। অন্যান্য খরচসহ ফসল উৎপাদনে প্রতি বিঘা জমিতে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ থেকে ৩৫ মন ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে, যার বর্তমান পাইকারি বাজার মূল্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আছে বলে দাবি করে ইউসুফ আলী।
ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় এলাকায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ভুট্টা চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ভুট্টা চাষে আগ্রহী চাষিরা ইউসুফ আলীর পরামর্শ নেওয়ার জন্য ও তার ক্ষেত দেখতে নিয়মিত ছুটে আসছে ওই এলাকায়। এ বছরেই এই এলাকায় তার পরামর্শে আরো ১৪ থেকে ১৫ জন চাষি ভুট্টা চাষ করেছেন।
সব জমিতেই ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে আরো কয়েকশ’ একর জমিতে তারা ভুট্টা চাষ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ভুট্টা চাষে ইউসুফ এর সাফল্য দেখে এলাকার মানুষের কাছে তিনি এখন ভুট্টা ইউসুফ নামে পরিচিত লাভ করেছেন।
কৃষক ইউসুফ আলী জানান টেলিভিশন ও উপজেলা প্রশাসনের বহুমুখী কৃষি উৎপাদনের বিষয় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ৬০ বিঘা জমিতে ভুট্টো, মুগ ডাল এবং ফুট চাষ করেন। সবগুলো ফসলের পাম্পার ফলন হলেও বর্তমানে জমিতে পানি উঠে যাওয়ায় ফসল গুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া পাইকারি মূল্যে এককালীন বিক্রি করতে না পারলে লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এই নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেন মার্কেটে নিয়ে বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাইলে তিনি অনেক লাভবান হবেন।
ইউসুফ আলী আরো জানান, আমাদের অঞ্চলে রবিশস্য চাষাবাদ করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। তবে নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে যে কোনো ধরনের রবিশস্য চাষ করলে বৈশাখ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্যোগের আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়। তাহলে কৃষক অধিক লাভবান হবে এবং এই এলাকার এক ফসলি জমিগুলো আর খালি পড়ে থাকবে না। উপযুক্ত সময় জমি চাষাবাদে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। যাহা প্রশাসনিক সহযোগিতা ছাড়া কখনোই দূর করা সম্ভব না। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে এ এলাকার নদীর তীরবর্তী এক হাজার একর জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব বলে ইউসুফ আলী দাবি করেন। এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা সোমা রানী দাস ও কৃষিবান্ধব কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন, আগামীতে কৃষকের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কৃষকের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।