ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাগেরহাটের ৩৫ মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার ফেল বিপর্যয়

বাগেরহাটের ৩৫ মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার ফেল বিপর্যয়

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয়। ৬২টি মাদ্রসায় প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭ জন। আর সূর্যমুখী হালদার বাড়ি বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় ১০ পরীক্ষার্থীর দশজনই ফেল করেছে। ১০ জন শিক্ষকের বিপরিতে দশ শিক্ষার্থীই ফেল। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকদের উদাসীনতা, মাদ্রাসায় সঠিকভাবে পাঠদান না করা এবং নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না এসে শিক্ষা অফিসের দরজায় গিয়ে নিয়োগবাণিজ্যসহ নানাবিধ তদবিরে নিয়োজিত থাকেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানসহ শিক্ষকদের বড় একটা অংশ। এ কারণে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় প্রকাশিত ফলাফলে এই বিপর্যয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে অংশগ্রহণ করে ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৭৩৫ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৫১ জন, অকৃতকার্য হয়েছে ৮৫৪ জন। উপজেলায় গড় পাসের হার ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ- ৫ পেয়েছে মাত্র ৭ জন।

৬২টি মাদ্রাসায় মধ্যে ৩৫টি মাদ্রসায় চরম ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। ফলাফল বিপর্যয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এজি মকবুল হোসেন দাখিল মাদ্রাসার ৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন, পুটিখালি ইসলামিয়া আলিম মাদ্রসায় ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫, সোনাখালি আজিজিয়া আলিম মাদ্রসায় ৩৮ জনের মধ্যে ২৪, এবি গজালিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২৮ জনের মধ্যে ১৪, হামসাপুর দৌলদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৫৭ জনের ২০, পোলেরহাট আজাহারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৪২ জনের মধ্যে ১৪, কদম রসুলেরপার দাখিল মাদ্রসায় ২৪ জনের মধ্যে ১৪, সেলিমগড় চিংড়িখালি ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসায় ২৭ জনের মধ্য ১৭, এস চন্ডিপুর দাখিল মাদ্রসায় ২৮ জনের মধ্যে ১৭, নেহালপুর কুয়ারদা দাখিল মাদ্রাসায় ২৫ জনের মধ্যে ১৯, শ্রেনিখালি ইসাহাক আলী দাখিল মাদ্রসায় ২৬ জনের মধ্যে ২০, চরহোগলাবুনিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসায় ২২ জনের মধ্যে ১৩, ফুলহাতা ফজলুল করিম দাখিল মাদ্রসায় ২৮ জনের মধ্যে ২৩, ছাপরাখালি গাজীরগাট দাখিল মাদ্রাসায় ২০ জনের মধ্যে ১৪, পঞ্চগ্রাম সম্মিলিত ইউসুফিয়া দাখিল মাদ্রাসা ৩৯ জনের মধ্যে ২৭, তালিমুনেচ্ছা দাখিল মাদ্রসায় ১৯ জনের মধ্যে ১৮, সোমাদ্দারখালি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৩১ জনের মধ্যে ১৭, গুলশাখালি ফাজিল মাদ্রাসায় ৩০ জনের মধ্যে ১৮, গুলজিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় ২৬ জনের মধ্যে ২১ জন, এনায়েতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ১০ জনের মধ্যে ৭, হামিজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৩২ জনের মধ্যে ১৫, হাজী ইব্রাহিম স্মৃতি দাখিল মাদ্রসায় ২০ জনের মধ্যে ১১, বিএসএস দাখিল মাদ্রাসায় ২৭ জনের মধ্যে ১৮, বিএস ওহেজিয়া দাখিল মাদ্রসায় ২১ জনের মধ্যে ১৬, সুতালরি সফিজ উদ্দিন দাখিল মাদ্রসায় ১০ জনের মধ্যে ৮, সন্যাসী বরিশাল লতিফিলা দাখিল মাদ্রসায় ৩৮ জনের মধ্যে ২৩, নিশানবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জনের মধ্যে ২৮, কাঁঠালতলা গিয়াসিয়া দাখিল মাদ্রসায় ১৬ জনের মধ্যে ১০, দারুল কোরআন ফজলুল করিম দাখিল মাদ্রাসায় ৫০ জনের মধ্যে ২৮, দক্ষিণ সুতালড়ি মমিম উদ্দিন দাখিল মাদ্রসায় ২৮ জনের মেধ্য ৯, মানিকমিয়া দাখিল মাদ্রসায় ১৯ জনের মধ্যে ৯, আবু হুরাইরা দাখিল মাদ্রসায় ৩৬ জনের মধ্যে ২২, ঘষিয়াখালি ইসালামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জনের মধ্যে ১৮ জন ফেল করেছে। ফলাফলের চরম বিপর্যয়গ্রস্ত একাধিক মাদ্রসার সুপার জানান, বিবাহিত নারীদের ডেকে এনে ফরম ফিলাম করানো হয়ে থাকে। আবার উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বাল্যবিয়ে পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া। কোভিটকালিন সময়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিবাহিতরা, বিয়ের পরে পড়াশোনা করতে চায় না ফলাফল বিপর্যয়ে এটাও একটা বড় কারণ। ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায়, স্বচ্ছতার সাথে পরীক্ষা উঠাতে পেরেছি যার ফলে মেধা তালিকায় সঠিক রেজাল্ট বের হয়ে আসছে, তবে মাদ্রসা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মানোন্নয়ন করার জন্য আমরা কাজ করছি। এ ব্যাপারে বাগেরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া ইসলাম বলেন, মোরেলগঞ্জে এমপিওভুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠানে ফলাফল খারাপ হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান আমরা পর্যবেক্ষণে রাখার পাশাপাশি ফলাফল কেন এতো খারাপ হলো তা যাচাই-বাছাই করব, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। এবং পরবর্তীতে ভালো ফলাফল করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত