ভেজাল সারে সয়লাব শ্যামনগর এলাকার গ্রামগঞ্জের হাটবাজার। মাটি, সাদা পাউডার, ম্যাগনেসিয়াম দিয়ে তৈরি এসব সার ব্যবহার করে একদিকে কৃষক যেমন হচ্ছেন প্রতারিত, অন্যদিকে ভেজাল ও নকল সার ব্যবহার করে নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণাগুণ। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। তাই অবিলম্বে ভেজাল সার বাজারজাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. নজিবুল আলম বলেন, ভেজাল ও নকল সার উৎপাদন এবং বাজারজাত ঠেকাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান শুরু হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বলেন, ভেজাল ও নকল সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। সর্বোপরি নকল ও ভেজাল সার ব্যবহারের ফলে ভূমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নকল ও ভেজাল সার উৎপাদন এবং বাজারজাত বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন উপজেলায় সয়লাব হয়ে গেছে নকল সারে। কৃষকরা আসল ও নকল সারের মধ্যে পার্থক্য না বোঝার কারণে প্রতারিত হচ্ছে। নকল ও ভেজাল সার কৃষিকাজে ব্যবহার করার কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বাজারে সয়লাব হওয়া ভেজাল সার ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি। এসব ভেজাল সার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ডলোচুন (এক ধরনের সাদা পাউডার), মাটি ও ম্যাগনেসিয়াম। যা তৈরি হয় ফেনী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর ও ফরিদপুরের নকল সার তৈরির কারখানায়। কোনো কোনো নকল সার তৈরির কারখানায় আবার আসল সারের সঙ্গে মেশানো হয় নকল সার। এসব উপাদান দিয়ে তৈরি সারের বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ভেজাল সার তৈরি চক্র সাধারণ ডিলারদের কাছে বিক্রি করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। অথচ আসল সার বাজারে বস্তাপ্রতি বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। অতি লাভের আশায় কিছু অসাধু ডিলার আসল সারের দামে বিক্রি করছে নকল এসব সার। নকল সার কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকার কৃষকরা বার বার জেলা প্রশাসক ও জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছে। আবেদনে অভিযোগ করেন শ্যামনগর উপজেলায় নকল ও ভেজাল সার বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা নকল ও ভেজাল সার শ্যামনগরের, বংশীপুর, মুন্সীগঞ্জ, ভেটখালী, নওয়াবেকী, কাশিমাড়ী, নুরনগর বিভিন্ন এলাকার সারের দোকানে মজুত রাখা হচ্ছে। পরে তাদের তৈরি সাপাই চেনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। নকল ও ভেজাল সারের কারণে একদিকে কৃষক যেমন প্রতারিত হচ্ছেন অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।