কেশবপুরে নদের বুকে ভাসমান বেডে সবজি চাষ

স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক-কৃষাণীরা

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে নদের বুকে ভাসমান বেডে সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। উপজেলার মধ্যকুল রাজবংশি পাড়া এলাকায় হরিহর নদের বুকে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন একদল কৃষক-কৃষাণী। যাদের বসত ভিটা ছাড়া কোন কৃষি জমি নেই। তাদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষক-কৃষাণী ওই নদীর শেওলা দিয়ে ধাপ তৈরি করে তার ওপর বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করেছেন। নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণ ও কৃষি উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সবজি বেডে চাষ করা হয়েছে লাল শাক, সবুজ শাক, পুইশাক, ডাটা শাক, পালন শাক ,মিষ্টি কুমড়া, কচু শাক, পেয়াজ ,রসুন এবং ভাসমান বেডের ওপর মাচা (বান) করে লাউ ও চাল কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। তাদের সবজি বেড পরিচর্যা করার জন্য ২টি ডোঙ্গা নৌকা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষক নীল রতন বিশ্বাস জানান, সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েও অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। জানা গেছে, হরিহর নদে শেওলায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। ওই নদীর তীরবর্তী মধ্যকুল রাজবংশি পাড়ার জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করতে ব্যর্থ হয়ে বেকার হয়ে পড়েন। এ সময় হরিহর নদের শেওলাকে কাজে লাগিয়ে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কৃষি বিভাগ ভাসমান বেডে সবজি চাষের ওপর মধ্যকুল রাজবংশি পাড়ার শতাধিক কৃষক-কৃষাণিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উপজেলার মধ্যকুল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস জানান, সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকরা নদীর শেওলা প্রথমে স্তুপ করে রাখেন। শেওলা পচে ধাপ তৈরি হলে তার ওপর দেওয়া হয় ভার্মি কম্পোস্ট। এরপর সবজির বীজ বপণ করা হয়। প্রতিজন কৃষক ৩৬ টি বেড তৈরি করে তার ওপর সবজি চাষ করেছেন। পযার্য়ক্রমে আরো সবজি বেড তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। মধ্যকুল রাজবংশি পাড়ার পারুল বিশ্বাস জানান, তিনি ওই নদীতে তিনটি ভাসমান বেড করেছেন। যার উপর লাল শাক, সবুজ শাক, পুইশাক, ডাটা শাক এবং ভাসমান বেডের ওপর মাচা (বান) করে লাউ ও চাল কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। এতে তিনি সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, হরিহর নদ পাড়ের উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের জেলেপাড়ার মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিম্ন। সেখানকার নারীদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে হরিহর নদে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয়করণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর ফলে ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি ও মশলার আবাদ করে ওই পাড়ার অন্তত ২০টি পরিবার নিজেদের সংসারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণ ও কৃষি উপকরণ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।