এমভি আব্দুল্লাহ

মধুখালীতে তারেকুলের বাড়িতে আনন্দের জোয়ার

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. মনিরুজ্জামান মৃধা মন্নু, মধুখালী (ফরিদপুর)

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামে। বর্তমানে গ্রামটিতে বইছে আনন্দের জোয়ার। গ্রামে ফিরতেই আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনসহ গ্রামবাসী। গতকাল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বড় ভাই হাসানের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছান তারেকুল। বাড়িতে ঢুকতেই হাসি ফুটে ওঠে সবার মুখে। তারিকুলকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী। সরেজমিন তারেকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে প্রবেশের পরই বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা হাসিনা বেগম বুকে জড়িয়ে ধরেন আদরের সন্তানকে। এ সময় স্ত্রী নুসরাত জাহান জুথীসহ সবার চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু। তারেকুল তার দেড় বছর বয়সি একমাত্র কন্যা তানজিহাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছেন। স্ত্রী জুথীর মুখে হাসি। স্বামীকে দেখতে পেয়েও কথা বলতে পারছিল না সে। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ। তারেকুল বাড়িতে আসার খবর পেয়ে ভোর থেকেই চলছে নানা আয়োজন। তারেকুলের স্ত্রী আগে থেকেই কেক এনে রেখেছেন, সবাই মিলে কেক কাটলেন। একে অপরকে খাইয়ে দিলেন। এছাড়া তৈরি করা হচ্ছিল তারেকুলের পছন্দের চিতই পিঠা, আর মাংস। এছাড়া শোল মাছসহ নানা পদের রান্নাও হচ্ছে। তারেকুলের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমরা তো এবার ঈদ করতে পারি নাই। আগেই বলেছিলাম, ছেলে যেদিন বাড়িতে আসবে, সেই দিনই আমাদের ঈদ। আজ আমাদের ঈদ।’ তারেকুল ইসলাম বলেন, জীবনের ওই ক’টা দিন স্মরণীয় থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম হয়তো আর কোনোদিন কারো সঙ্গে দেখা হবে না। আল্লাহর রহমতে বাবা-মার দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্বিষহ দিন কেটেছে। কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। সব সময় আতঙ্কের মধ্যদিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। এ রকম দিন যেন কারো জীবনে না আসে। তারপরও সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে।’ তারেকুলের স্ত্রী জুথী বলেন, ‘অনেক খুশি আমি। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তারেকুলের জন্য বিশেষ আয়োজন রয়েছে বাড়িতে। আজকের দিনটি আমাদের ঈদ।’ অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তারেকুল ইসলাম। ছকড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে যোগ দেন চাকরিতে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে। ভারত মহাসাগর অতিক্রমকালে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েন।