বোরোর ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
দিনাজপুর অঞ্চলটি দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। জেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সোনালি বোরো ধান। কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের পরও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। হাটবাজারে ধানের দাম কম থাকায় প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। তাই ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চাইতে ৭১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন (চালে)। তবে চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, কেউ ভ্যানে, কেউ গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান। আবার কেউ রাস্তার ওপর ও খোলা মাঠে ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আউলিয়া পুকুর গ্রামের কৃষক আলমীর বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান লাগিয়েছি। তার মধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কাটছি ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি না থাকায় ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ধানের বাজার খুব খারাপ এক বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আমার এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ৪৫ মণ। এক মণ ধান বিক্রি করছি ৯৫০ দরে। তাহলে বলেন কয় টাকা লাভ থাকে। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম যে পরিমাণ বাড়ছে শুধু কৃষকের ধানের মূল্য নেই। কৃষক যদি না বাঁচে তাহলে তো দেশের অবস্থা বেহাল হবে।
জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বড় গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি সাধারণ কৃষক। মানুষের কাছে বর্গা নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে বোর ধান লাগিয়েছি। আল্লাহর রহমতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার তাতে গায়ে গায়ে যায়, লাভ নাই। এক বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়েছি, এরপর হাল চাষ, ধানের বীজ, পানি, সার কীটনাশক সব কিছুর যে দাম তাতে এদিকে খরচ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন ৪০ মণ। বর্তমান ধানের বাজারে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা মণ। তাহলে লাভ কোথায় ধান চাষ করে।
কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ধান আবাদ করে কৃষকের কিছু থাকে না। প্রতিবার ধানের দাম কম থাকে। কিন্তু সার, কীটনাশক, পানি, ধান কাটা শ্রমিকে অতিরিক্ত খরচ লাগে। এক বিঘা জমিতে খরচ ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় ধানের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে। সব ধান বিক্রি করে অল্প কিছু টাকা থাকে। তা দিয়ে পোষায় না। বাজারে সব কিছুর দামে বেশি। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৯ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত ১১ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়েছি ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই ধান কাটার পারমর্শ দিচ্ছি। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ধানের ফলন টার্গেট ৪.৫ মেট্রিক টন। কিন্তু আমরা আগাম জাতের ধানগুলোতে হেক্টর প্রতি ৪.২ মেট্রিক টন ধান পাচ্ছি।