পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার চায়ের দোকানদার মো. নজরুল ইসলামের ছেলে সাকিব খানের। কিন্তু তার পড়ালেখায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় দারিদ্র্যতা আর অভাব-অনটন। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে স্কুল শেষে বাবার চায়ের দোকানে কাজ শুরু করে সাকিব খান। আর এভাবে পড়ালেখা করেই এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে মেধাবী শিক্ষার্থী সাকিব খান। অধম্য মেধাবী সাকিব খানের পরীক্ষার ফলাফলে খুশিতে আত্মহারা মা-বাবাসহ সহপাঠী ও শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল সাকিব খানের। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এরপর ভর্তি হয় সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে হিমশিমে পড়তে হয় চায়ের দোকানদার বাবা মো. নজরুল ইসলামকে। একদিনে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অন্যদিকে ছেলের পড়ালেখার খরচ আর প্রাইভেটের খরচ।
দারিদ্র্যতা আর সংসারের অভাট-অনটনের মধ্যে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সাটুরিয়া বাজারের রুপালী ব্যাংকের নিচের বাবা নজরুল ইসলামের চায়ের দোকানে কাজে যোগ দেয় সাকিব খান। সাকিব খানের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, সংসারে অভাব অনটনের জন্য ছেলেকে ঠিকমতো ভালো জামা-কাপড়, ভালো খাবার দিতে পারি নাই। সংসারের অভাব-অনটন বুঝতে পেরে ছেলে (সাকিব খান) নিজে আগ্রহ করে আমার সাথে চায়ের দোকানে কাজ করেছে। ওর (সাকিব খান) পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে আমরা কষ্টে চললেও সাকিবকে একটু ভালো রাখতে চেয়েছি। অভারের কারণে অনেক সময় বই খাতাসহ অনেক কিছু দিতে পারি নাই। ছেলের পড়ালেখার খবর জানতে পেরে আমাদের ইউএনও স্যার বেশ কয়েকবার আমাকে সাহায্য করেছে। শাকিব এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর শুনে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তার রহমান সাকিবকে কিছু বই ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন জানান, পড়ালেখার বিষয়ে সাকিব খানের মনোবল ছিল অনেক কঠিন। ক্লাসে পড়ার সময় খুব মনযোগী ছিল সব সময়। সাকিবের মেধার কাছে দারিদ্র্যতা হার মেনেছে। এবছরের এসএসসি পরীক্ষায় ১২০০ নম্বরের মধ্যে সাকিব খান ১১৮০ নম্বর পেয়েছে। এমন মেধাবী শিক্ষার্থী খুব কম আছে। তার মতো শিক্ষার্থী আমাদের স্কুলের জন্য গর্বের। তার মেধা ও সাফল্য ধরে রাখতে পারলে দেশ ও জাতি একজন মেধাবী পাবে। আমরা সাকিবের জন্য দোয়া করি, যাতে জীবনে অনেক বড় হতে পারে।