আগামী মঙ্গলবার ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মাঠে তত উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাবুল ওমর বাবুর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনি। এছাড়াও ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করার অভিযোগে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন অফিসার, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। এদিকে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাবুল ওমর বাবুও জামপুর ইউনিয়নের একটি সভায় ঘোড়া প্রতীকের সমর্থনকারী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আবু জাফর চৌধুরী বীরুকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও একটি নির্বাচনি সভায় তার চৌধুরী বংশধরকে ২১ মে নির্বাচনের পর এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যার কারণে সাধারণ ভোটারদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভোটাররা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনারস প্রতীক ও ঘোড়া প্রতীকের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে। যার কারণে অনেক ভোটারই ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তবে ভোটারদের জোর দাবি নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র্যাব ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন মাহফুজুর রহমান কালাম। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি সোহাগ রনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে তার কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছে বলে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেন সোহাগ রনি। অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হুমকির পোস্টে দেখা যায়, সোহাগ রনি তার আইডিতে বারদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘোড়া প্রতীকের কর্মী মো. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে হুমকিস্বরূপ লিখেছেন, ‘বারদির কামাল। ঘোড়ার সাথে যোগ দিছে। কারণ সে এখন আর দালালি করার সুযোগ পায় না। দালাল কামালরে যদি পাই চোরের মতো বান দিমু’। ইত্যাদি ইতাদি। এছাড়াও সোহাগ রনিসহ আরো কয়েকজন কর্মীকে হুমকি দিয়েছেন সোহাগ রনি। হুমকি দেয়া ছাড়াও চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় সোহাগ রনি তার বাড়িতে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে নির্বাচনি মাঠে ভীতি প্রদর্শনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ঘোড়া প্রতীকের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যারও হুমকি দিচ্ছে। তাই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সোহাগ রনির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগপত্রে। এই অভিযোগ ছাড়াও কাঁচপুর, পিরোজপুর, শম্ভুপুরা, সনমান্দি, বারদি, নোয়াগাঁও ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন এলাকার ৪০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন করেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। তিনি গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এসব লিখিত অভিযোগ জমা দেন। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কর্মীদের হুমকিদাতা সোহাগ রনি সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক। প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ ও জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে আইনগতভাবে যা যা করা দরকার প্রশাসনিকভাবে তাই করা হবে। কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে পার পাবে না। সে যে-ই হোক না কেন। উল্লেখ্য, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া), উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল ওমর বাবু (আনারস), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু (মোটরসাইকেল) ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার (দোয়াত কলম)।