ইরি-বোরো মৌসুমে পানির অপচয় রোধে পরিবর্তিত শুকনা-ভেজা (এডব্লিউডি) নামে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে কৃষি বিভাগ। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি বিভাগ বিনা ধান-২৫ পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামে প্রথমবার চাষ করা হচ্ছে। এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধান চাষে ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় কম ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামে এই প্রথম এ পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে। তিন একর জমিতে ইরি-বোরো মৌসুমে পানির খরচ কম হয়েছে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন বলে জানান, স্থানীয় পর্যায়ের তিন কৃষক আহসানুল কবির বাবু, হাচান আলী ও গোলজার সরদার। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানির স্তর অনেকটা নিচে নেমে যাওয়ায় জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ১ কেজি ধান উৎপাদন করতে জমিতে সাড়ে তিনশ’ থেকে ৪ হাজার লিটার পানির সেচ দিতে হয়। যার পুরোটাই ভূ-গর্ভস্থ থেকে গভীর কিংবা অগভীর নলকূপের মাধ্যমে তোলা হয়। এতদিন কৃষকরা সচেতনতার অভাবে চাহিদার অতিরিক্ত পানি জমিতে দিয়ে থাকত। মাটিতে শ্যাওলা পড়ায় গোড়ায় পচন ধরত। পোকা মাকড়ের আক্রমণসহ ফলনে বিপর্যয় দেখা দিত। ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয়ের কারণে প্রতি বছরের চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির তীব্র সংকট দেখা দিত। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, এ পদ্ধতিতে ১২ ইঞ্চি একটি প্লাস্টিক পাইপের ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত পাইপের চারিদিকে একাধিক ছিদ্র করা হয়। এরপর সেই পাইপ ধানের জমিতে বসানো হয়। পাইপটির ১০ ইঞ্চি মাটির নিচে পুঁতে রেখে বাকি ৩ ইঞ্চি উপরে রাখা হচ্ছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় ধানের চারা বেশি গজায়। রোগ বালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর কৃষক একরে ৭৫ মণ ধান উৎপাদন করতে পারছে। কৃষক আহসানুল কবির বাবু জানান, কৃষি অফিস থেকে দেয়া এডব্লিউডি প্রযুক্তি বোরো ধানের জমিতে স্থাপন করেছি। কৃষি কর্মকর্তারা পানি পরীক্ষাসহ এ প্রযুক্তির বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের ভালো ফলন পাইছি আমরা। পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. রাজিব হাসান বলেন, এটি একটি পানিসাশ্রয়ী পদ্ধতি। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এডব্লিউডি পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূ-গর্ভস্থ মিঠা পানির অযাচিত ব্যবহার রোধ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ হবে। কিটনাশকের ব্যবহারও কমে আসবে। এতে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। এ প্রযুক্তি পর্যায়ক্রমে ভেজানো ও শুকানো হয়। ফলে ধানের জমিতে পানি কম লাগে।