শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট

জনস্বাস্থ্য বিভাগের ট্যাঙ্ক বিতরণে কিছুটা স্বস্তি

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি অথচ নেই সুপেয় পানি। জনস্বাস্থ্য বিভাগের বৃষ্টির পানি প্রকল্পে ক্ষণিকের জন্য সমাধান মিলছে। লবণাক্ত পানির কোনো অভাব না থাকলেও সুপেয় পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্লোরাইড ও আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি হওয়ায় দৈনন্দিন জীবনে সুপেয় পানি যেন রীতিমতো এক জীবনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। নিরাপদ সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে উপকূলের অধিকাংশ বাড়ির বয়োবৃদ্ধ নারী ও শিশুরা দূর-দূরান্তে ছুটছে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট আরও প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূলীয় এ অঞ্চলের লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে গাছপালা, গবাদিপশু, ফসলি জমিতে কৃষি উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্যের উপরও মিষ্টি পানির অভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বর্তমানে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাকৃতিক উৎসের পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে মানুষের সীমাহীন কষ্টে হেঁটে, ভ্যান ও নৌকায় করে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে হয়। নিরাপদ পানি আনতে গ্রামের এলোমেলো, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পেরিয়ে যেতে হয় কিলোমিটার থেকে কিলোমিটার। এখানকার নদী-খাল-বিল-পুকুরের পানি বেশিরভাগ সময় থাকে লবণাক্ত, যা শুষ্ক মৌসুমে আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এসব উৎসের পানি পান করা ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যায় না। এরপরও বাধ্য হয়ে অনেকে পান করে থাকে। এই লবণাক্ত পানি পান করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়েরিয়া, আমাশয়, নারীদের গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা, কিডনি রোগ ও চর্মরোগের মতো নানা জটিল এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এ উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এদিকে উপকূলে সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে পানি সংরক্ষণের ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। ‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ ও ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ নামে দুটি প্রকল্পের আওতায় দরপত্র মোতাবেক মানসম্মতভাবে কাজ হচ্ছে। প্রকল্প অনুযায়ী জানা যায়, পানির উৎসের সব স্থানের তালিকা ৫০ শতাংশ প্রণয়ন করেন জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাকি ৫০ মতাংশ প্রণয়ন হয় উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে। জনপ্রতিনিধিরা যাচাই-বাচাই করে তালিকা প্রণয়ন করে থাকেন।

সে তালিকা অনুযায়ী বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ৩ হাজার লিটার বিশিষ্ট ট্যাংক বিতরণ, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম ও পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া পিএসএফের আওতায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পুকুরগুলোকে পুনঃখননের মাধ্যমে কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। মিনিপাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের মাধ্যমে মূলত পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে পানের উপযোগী করা হয়। তবে তা চাহিদার তুলনায় কম। তবুও হাজার হাজার মানুষ সুপেয় পানির আওতায় এসেছে। পরিবারভিত্তিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম কাজ চলমান থাকায় তারা আশায় বুক বেঁধে আছে। ‘সরকারিভাবে পানির ট্যাঙ্ক পেয়ে এলাকার কিছু মানুষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে উপকৃত হচ্ছেন। শ্যামনগর উপকূলে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে কিছুটা হলেও সমাধান মিলছে জনস্বাস্থ্য বিভাগের বৃষ্টির পানি প্রকল্প। সুপেয় পানি সংকট ছিল তা থেকে অনেকটা মুক্তি পেয়েছে। এই পানি দিয়ে এখন রান্না ও খাওয়ার কাজ ভালোভাবে চলছে। উপকূলীয় এলাকার পানির ট্যাঙ্ক সরবরাহ আরও বাড়ালে সুপেয় পানির সংকট লাঘব হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে মানুষকে লবণাক্ততা ও আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শ্যামনগর উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় এই এলাকার ৭০ শতাংশ মানুষ খাবার পানির সংকটে রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, এখন গরমকালে শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ খাওয়ার পানির সমস্যা সমাধানে সরকারিভাবে তিন হাজার পানির ড্রাম বিভিন্ন ইউনিয়নে দেয়া হচ্ছে।

এর পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করছি। শ্যামনগরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই উপকূলের অনেক পরিবার খাবার পানির কষ্ট থেকে ক্ষণিকের জন্য কিছুটা মুক্তি পেয়েছে। এলাকাবাসী জানান, জনস্বাস্থ্যের থেকে পানির ট্যাঙ্ক পেয়ে তারা যেন এক নতুন জীবন পেয়েছে। পরিবারের বাইরেও অনেক মানুষ এখান থেকে উপকৃত হচ্ছে। ক্ষণিকের জন্য হলেও শ্যামনগরবাসীর সুপেয় পানির কষ্ট ‘লাঘবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের অবদান অনস্বীকার্য। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজিবুল আলম জানান, সুপেয় নিরাপদ খাবার পানির তীব্র অভাব পূরণে সরকারিভাবে অধিকতর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উপকূলবাসী নিরাপদ সুপেয়/মিষ্টি পানির সংকট উত্তোরণে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’সমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্প দুটির কাজ অধিক হারে বরাদ্দের দাবি এলাকাবাসীর।