নালিতাবাড়িতে হাতির তাণ্ডব আতঙ্কে রাত কাটছে নির্ঘুম

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

উত্তরের জনপদ শেরপুর জেলা। এই জেলার তিনটি গারো পাহাড়বেষ্টিত উপজেলার মধ্যে নালিতাবাড়ি অন্যতম। অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এ উপজেলায় হাতির আক্রমণ তুলনামূলক বেশি হয়। বুনো হাতির অব্যাহত তাণ্ডবে নালিতাবাড়িতে গ্রামবাসীর নির্ঘুম রাত কাটছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে একদল বুনো হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। প্রথম দিকে ৪০ থেকে ৫০টি বুনো হাতি থাকলেও দিন দিন বংশবিস্তার করে এর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তারা বর্তমানে কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে একযোগে পাহাড়ি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি করে চলছে। বোরো ধানের মৌসুমের শুরু থেকেই সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে হাতির দল। এরইমধ্যে কৃষকরা তাদের পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন।

আবার কোনো কোনো এলাকায় ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। আবাদের শেষ প্রান্তে এসে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তাই জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। বন বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলেও বেশিরভাগ মানুষ নানা জটিলতায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। বন বিভাগের ক্ষতিপূরণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো ক্ষতিগ্রস্তকে অবশ্যই নিজস্ব রেকর্ডিং জমিতে বসবাসকারী হতে হবে। কিন্তু অনেকেরই নিজের জমি থাকায় ভূমিহীন পরিবারগুলো বন বিভাগের খাসজমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। তাছাড়া বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা না করারও অভিযোগ রয়েছে। তাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য শর্ত শিথিল করার দাবি এলাকাবাসীর। আবার অপরদিকে বসবাসকারী বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। করতে পারছে না অন্য জায়গায় স্থানান্তর।

ফলে আইনের বেড়াজালে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। সলেমান মিয়া ও রহিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ক্ষুধার্ত হাতিগুলো খাবারের অভাবে পাগল হয়ে গেছে। কখন কোথায় আক্রমণ করছে বলা বাহুল্য।

আগে বাড়িঘর ও ফসলে আক্রমণ করলে মশাল জ্বালিয়ে, ডাক চিৎকার করে, ভেপু বাজিয়ে, হইচই করে তাড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এখন তারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন আর এসব দিয়ে কাজ হয় না। মূলত বনে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য না থাকায় হাতিগুলো ফসলের মাঠে চলে আসে। আবার মাঠে ফসল না থাকলে আমাদের বাড়িতে এসে তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি তছনছ করে গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় হাতিগুলোকে তাড়াতে গেলে পা দিয়ে মানুষ পিষে মারছে। আমরা গ্রামের মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি। এতেই বন্যহাতি আর মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এর সমাধান প্রয়োজন। রফিক মিয়া নামে এক স্কুলশিক্ষক জানান, বন্যহাতিগুলো যুগের পর যুগ বাংলাদেশের এ এলাকায় প্রায় প্রতি রাতে কোথাও না কোথাও তাণ্ডব চালায়।

উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের হাজার হাজার কিলোমিটার বনভূমি রয়েছে। সেখানে হাতির পর্যাপ্ত খাদ্যও রয়েছে। দুই দেশের সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সমস্যা সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি। ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতি দ্বারা নিহত পরিবারকে তিন লাখ, আহতকে এক লাখ এবং ফসল ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। সরকার স্থায়ী সমাধানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ ক্ষতিপূরণ চালিয়ে যাবে।

তবে অনেকেই ক্ষতিপূরণের আওতায় আসছে না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা তো চাকরি করি। আইনের বাইরে তো আর কাজ করতে পারব না। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে।

বন বিভাগের মাধ্যমে তাদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকেন আবেদন করলেই নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালানোর কেরোসিন তেল, লাইটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।